যিনি জাতির জন্য নিজের পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, ১৫ আগষ্ট তাকেই সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। এই দিনটি বাঙালি জাতির জন্য সব থেকে কলঙ্কের দিন, এমনটি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১ আগস্ট) সকালে গণভবনে কৃষকলীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা হলো ইতিহাস থেকে। ৭ মার্চের ভাষণ হলো নিষিদ্ধ। ইতিহাস হলো বিকৃত। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা যে বিজয়ী জাতি, সেই গৌরব নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে, আন্দোলন করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে; রক্ত দিয়েছে। এই আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমরা গণতন্ত্র পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে যে মানুষের উন্নতি হয়, আজকের বাংলাদেশে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। যে দল জনগণের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে, যে দল এত আত্মত্যাগ করতে পারে; একটা জাতির জন্য এত জেল-জুলুম সহ্য করতে পারে সেই দল যদি তাদের নীতি ও আদর্শকে ধারণ করে তবে সেই জাতির ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটে। আওয়ামী লীগ তা বাস্তবায়ন ও প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল ২০০১-০৬ সালে, তারা মানুষের জন্য কী করে গেছে? বরং, ১৯৯৬-০১ পর্যন্ত আমরা যা কিছু অর্জন করেছিলাম, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম, বিদ্যুৎ ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিলাম। রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছিলাম। শিক্ষার বিস্তার ঘটানো, স্বাক্ষরতার হার ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশে উন্নীত করা, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা, ভূমিহীনদের ঘর দেয়ার জন্য জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা- এসব কিন্তু আমরা একে একে শুরু করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। সেটাই ছিল চক্রান্ত। কিন্তু তাতে কী হয়েছে? বিদ্যুৎ ৪ হাজার ৩ শ’ মেগাওয়াট থেকে কমে ৩ হাজার ২ শ’ মেগাওয়াটে নেমেছে। ৪০ লক্ষ্য মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি আর ২০০১ সালে ২৬ লক্ষ্য মেট্রিক টন খাদ্য আমরা উদ্বৃত্ত রেখে এসেছিলাম। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন আবার দেখি ৩০ লক্ষ্য মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে খাদ্য ঘাটতি তৈরি করে বিদেশের কাছে ভিক্ষুক জাতি হিসেবে পরিচিত করে ভিক্ষা চেয়ে নিয়া আসাই ছিল বিএনপির কাজ। অবশ্য ভিক্ষা চাওয়া না, এটাও একটা ব্যবসা। খাদ্য কিনবে, ব্যবসা করবে আর কমিশন খাবে-এটিই ছিল বিএনপির নীতি। অস্ত্র চোরাকারবারির সাথেও তাদের সম্পর্ক। দেশকে সম্পূর্ণভাবে পরনির্ভরশীল করা ও দেশের মানুষের নিরাপত্তা ধ্বংস করা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে মদদ দেয়া- এসবই ছিল বিএনপির নীতি। প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিক্ষার পরিবেশ হয়েছিল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস। তাদের মানি লন্ডারিংয়ের টাকা দেশে ফিরিয়ে এনেছি আমরা। এখন তাদের মুখেও নীতিকথা শুনতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে; তারা যেন সম্মানের সাথে চলতে পারে। কারো কাছে যেন হাত পেতে চলতে না হয়। কারণ, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। বাংলাদেশ যেন কখনও ভিক্ষুক জাতি না হয়; সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। কিন্তু সকল চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।