ভোলা প্রতিনিধি:ভোলায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত সেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আব্দুর রহিমের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার (১ আগষ্ট) বিকেলে ভোলা পৌরসভার গোরস্তান জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আব্দুর রহিমের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে লাশ কাটা ঘরের সামনে গুলিতে নিহত আব্দুর রহিমের মা ফখরুন নেছা (৬৫) বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বলছিলেন, ও আমার মনারে, জাদুরে, ও আমার বাজানরে, তুমি কী আর আমার কোলে ফিরা আইবা না।
ঈরিবার সূত্রে জানাযায়, কয়েক দিন আগে ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে প্রচ- ব্যথা পান নিহত আব্দুর রহিম মাতব্বর (৩২)। লাঠিতে ভর দিয়ে গতকাল রোববার সকালের দিকে দ্রব্যমূল্য, গ্যাস-বিদ্যূৎ ও জ্বালানি তৈলের দাম নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ডাকা বিএনপির সমাবেশে যোগ দেন তিনি। বিএনপি নেতা–কর্মীরা বলছেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিলে পুলিশের গুলিতে মাটিতে পড়ে যান আব্দুর রহিম। সবাই পালালেও তিনি পালাতে পারেননি। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে নিতে মারা যান।
ভোলা পৌরসভার গোরস্তান জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আব্দুর রহিমের জানাজা হয়। জানাজা শেষে লাশ যখন ভোলা শহর থেকে তার গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ-পূর্বে কোড়ালিয়া গ্রামে নেওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে তোলা হচ্ছিল, তখন ‘মা’ ফখরুন নেছা দুই হাত তুলে বলছিলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করি নয়, আমার বুকের শিশু কোনো অপরাধ করে নয়, তার পরেও আমার ছেলেকে মাইরা খুশি অইছে, আল্লাহ আমনে ছাড় দিয়েন না।
আব্দুর রহিমের বাবা হারেছ মাতব্বর কয়েক বছর ধরে শারীরিকভাবে অচল। ছেলের শোকে আরও অচল হয়ে পড়েছেন। তিনি বাড়িতে চিকিৎসাধীন। ছেলের লাশের কাছে আসতে পারেননি। তাঁরা ৪ ভাই, ২ বোন ছিলেন। ভাইদের মধ্যে আব্দুর রহিম সবার ছোট।
নিহত আব্দুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম (২৬) ৪ সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বড় ছেলে ইয়াছিন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তারপর মেয়ে জান্নাত, ছেলে আবদুল্লাহ ও ওসমান। সন্তানদের মধ্যে সবার ছোট ওসমানের বয়স মাত্র ২ বছর। সংসারে আয় করার মতো একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন আব্দুর রহিম। বার্ষিক জমি লগ্নি নিয়ে, কখনো বর্গায় সবজির চাষ করতেন। তাঁর অবর্তমানে কীভাবে সংসার চলবে, কীভাবে সন্তানেরা বড় হবে, এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই স্ত্রী খাদিজা বেগমের। স্বামী হত্যার বিচার চেয়েছেন তিনি।
ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর বলেন, আব্দুর রহিম বিএনপির ডাকেই গ্রাম থেকে শহরে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। সমাবেশে এসেই পুলিশের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন। পুলিশ তাঁকে গুলি করে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মেরেছে। অবশ্যই আব্দুর রহিমের পরিবারের জন্য কিছু করা হবে, যেন তাঁর পরিবার ভালো থাকে, সন্তানেরা লেখাপড়া করতে পারে।