জাতীয় নির্বাচনমুখী সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব ছিল শতাধিক। এর কোনটি নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন, কোনটি সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত। ছোট দলগুলোর বেশিরভাগের প্রস্তাব ভোট পড়ার হার অনুযায়ী সংসদের আসন বিন্যাস। এতে প্রার্থী নয় সরাসরি ভোট হবে দলের মধ্যে। সারা দেশে কোনো দল এক শতাংশ ভোট পেলে সংসদে তিনটি আসন পাবে। এ পদ্ধতিতে সম্মতি জানিয়ে সিইসি বলেন, এতে কালো টাকার প্রভাব ও সহিংসতা কমবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রস্তাব ইতিবাচক। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক বিশ্বাস-আস্থার অভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন।
প্রতিবেশি নেপাল, ফিনল্যান্ড ছাড়াও আফ্রিকা ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ভোটের এই পদ্ধতি প্রচলিত। ইসির সংলাপে এমন প্রস্তাব সম্মতি দিয়েছে জাতীয় পার্টিও।
নির্বাচন বিশ্লেষক ড. মো. আব্দুল আলিম বলেন, এটা করতে পারলে যেটা হবে, প্রার্থীদের টাকা খরচ কমে যাবে। প্রার্থীদের মধ্যে মারামারি কম হবে। কারণ, তখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে দল। এটা করার জন্য দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। তারা যদি এ উদ্যোগটা নেয়, তাহলে বোধ হয় এটা করা সম্ভব।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা ইতিবাচক। তাহলে আমাদের কিছু কিছু সমস্যা সমাধান হবে। আমাদের অনেকগুলো সাংবিধানিক পরিবর্তন করা দরকার। তার মধ্যে এটা একটা বলে মনে করি, উচ্চ কক্ষ হওয়া দরকার। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা দরকার।
ভারতে লোকসভার সাধারণ নির্বাচন হয় একাধিক দিনে। এলাকা অনুযায়ী ভিন্ন দিনে ভোটের উদাহরণ আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত অনেক দেশেও। সংলাপে একাধিক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে ছোট-বড় কয়েকটি দল। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা সহজ হয় বলে মনে করেন সিইসি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী এক বা একাধিক দিনে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে ইসি।
ড. মো. আব্দুল আলিম আরও বলেন, এটা যদি বাংলাদেশে করা যায় নিঃসন্দেহে ভালো হবে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রথম ধাপে ভোট হলো কিন্তু ব্যালট বাক্স বা ইভিএম যন্ত্রগুলো কোথায় রাখবেন? যদি সরকারি কোনো জায়গায় রাখেন, তাহলে বিরোধী দলে যারা আছে, তারা প্রশ্ন তুলবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একাধিক দিনে নির্বাচনে ভারতে কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ সেখানে তাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ রকম দলীয় হয়ে যায়নি। তারা নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের সমস্যাটি হলো পক্ষপাতদুষ্টতা।
নির্বাচনের কাঠামোগত পরিবর্তনে বড় দলগুলোর সায় নিয়ে সংশয় আছে অনেকের। তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে কলুষিত পদ্ধতি বদলানো দরকার বলে মনে করেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।