চোখ জুড়ানো আর দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকতের ঢেউয়ের গর্জন । সৈকতের তটরেখায় লাল কাঁকড়ার দল বেঁধে ছোটাছুটি । সবুজ বনাঞ্চল গাছে গাছে পাখির কলকাকলি । নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা চারটির দ্বীপ; যার নাম জাহাজমারা, তুফানিয়া, সোনারচর ও চরহেয়ার । যেখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য ।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় ঘেরা দ্বীপ চারটির ভৌগোলিক অবস্থান নদী ও সাগর বেষ্টিত পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে। তবে এখানে যেমন আছে পর্যটন সম্ভাবনা, তেমনি রয়েছে কিছু সমস্যাও । এখানকার পর্যটন সম্ভাবনায় বাঁধা যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোটেল-মোটেল না থাকা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া । তবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে ঘিরে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে এ পর্যটন শিল্প ।
সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটার চেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে দ্বীপ রাঙ্গাবালীর পর্যটন স্পটগুলো এগিয়ে । কিন্তু যাতায়াতে সময় বেশি হওয়ায় পিছিয়ে ছিল এখানকার পর্যটন সম্ভাবনা । পর্যটনের সম্ভাবনাময় এলাকা হিসাবে পরিচিত রাঙ্গাবালীর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ মাধ্যম একমাত্র নৌপথ । তবুও অসংখ্য পর্যটক প্রাকৃতিক সান্নিধ্য পেতে এখানে ছুটে আসেন । কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ঢাকাসহ উত্তর অঞ্চলের অনেক পর্যটকই এখানে আসতে নিরুৎসাহিত হয়। কারণ হিসাবে পর্যটকরা বলছেন, নৌপথ নির্ভর রাঙ্গাবালীতে লঞ্চযোগে ঢাকা থেকে আসতে সময় লাগে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা । আবার যেতেও একই সময় ব্যয় হয় । আসা-যাওয়ার সময়ও নির্দিষ্ট ।
এতেও বিপাকে পড়ে অনেকেই। কিন্তু পদ্মা সেতুর কল্যাণে এখন সেই দুর্ভোগ সিংহভাগ লাঘব হয়েছে। পদ্মা সেতুর কল্যাণে সময় বাঁচবে প্রায় ৭-১০ ঘণ্টা । শুধু মাঝখানে আগুনমুখা নামক একটি নদী নৌপথে পাড়ি দিতে হবে। ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের। আসছে দেশি-বিদেশি পর্যটক ।
নয়নাভিরাম পর্যটন স্পটের নিদর্শন
অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে জেগে থাকা ‘সোনারচরে’ সোনা নেই ঠিকই, কিন্তু আছে সোনালি আভা । সূর্যের রশ্মি যখন সৈকতের ওপর পড়ে তখন দূর থেকে মনে হয়, সত্যিই সোনার আবির্ভাব হয়েছে এখানে। মনে হবে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে স্বর্ণের । সোনারচর উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে সাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত । বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সুন্দরবনের পরেই আয়তনের দিক থেকে এটি বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সমুদ্র সৈকত ।
সৌন্দর্যের কমতি নেই ‘জাহাজমারা’ দ্বীপেও । দ্বীপটির ভৌগোলিক অবস্থান মৌডুবি ইউনিয়নে । জাহাজমারার কাছেই আরও দুটি দ্বীপ রয়েছে । একটির নাম ‘তুফানিয়া’, অন্যটির নাম ‘চরহেয়ার’। যেখানে আছে নিবিড় সবুজের সমারোহ । সৈকতে অগণিত লাল কাঁকড়ার ঝাঁক । আছে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত । বন বিভাগের ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল । জেলে নৌকার বহর । কোনোটিতেই নেই হোটেল-মোটেল । পর্যটকদের সুবিধার জন্য সোনারচর, জাহাজমারা, তুফানিয়া ও চরহেয়ারে পন্টুন স্থাপন করা জরুরি । একইসঙ্গে হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউজসহ আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করলে পর্যটকদের এসব দ্বীপে আসার আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে । প্রশাসনের তথ্য বলছে, রাঙ্গাবালীর পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে ট্যুরিস্ট জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেই সম্ভাবনা আরও বেড়েছে ।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা পর্যন্ত যাবেন । ভাড়া জনপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা । গলাচিপা সদর থেকে সড়ক পথে ১৫ থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পানপট্টি কিংবা বোয়ালিয়া ঘাটে যাবেন। সেখান থেকে স্পিটবোট কিংবা লঞ্চে রাঙ্গাবালী যাবেন । ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা ও ৬০ টাকা ।