ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ ক্রিমিয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এবং ক্রিমিয়ার স্বাধীনতার মধ্যে দিয়েই এ যুদ্ধ শেষ হবে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপে রুশ একটি বিমানঘাঁটিতে কয়েক দফা বিস্ফোরণে একজন নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ পর দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি তার বক্তব্যে বিস্ফোরণের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি তবে তিনি বলেছেন, ক্রিমিয়া ইউক্রেনেরই অংশ এবং আমরা কখনই এটা ছেড়ে দেব না।
ক্রিমিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের অংশ। কিন্তু ২০১৪ সালে একটি গণভোটের পর থেকে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখেছে রাশিয়া। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে অবৈধ হিসাবে দেখে। অনেক ইউক্রেনীয় মনে করেন তখন থেকেই রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ জড়িয়েছে ইউক্রেন।
মঙ্গলবার ক্রিমিয়ার পশ্চিমে রুশ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় নভোফেডোরিভকার কাছে সাকি সামরিক ঘাঁটিতে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটে।
সোশ্যাল মিডিয়ার ফুটেজে দেখা যায় বিস্ফোরণের সময় সমুদ্র সৈকতে থাকা পর্যটকরা ছোটাছুটি শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন তারা কমপক্ষে ১২টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। ক্রিমিয়ায় রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আটজন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলছে গোলাবারুদের একটি গুদামে বিস্ফোরণগুলো হয়েছে।
ঘটনার সাথে ইউক্রেনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক। ডজড নামে একটি অনলাইন টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, অবশ্যই নয়। এর সাথে আমাদের কী আছে?
ইউক্রেন যদি ক্রিমিয়ায় কোনো হামলা চালায় তবে সেটাকে খুবই গুরুতর একটি পদক্ষেপ হিসাবে নেবে রাশিয়া। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ গতমাসেই এ বিষয়ে ইউক্রেনকে হুঁশিয়ার করে দেন।
জেলেনস্কি মঙ্গলবার দেওয়া তার বক্তব্যে কোথাও ওই বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ না করলেও উপদ্বীপ সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা ভুলব না যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এই রাশিয়ান যুদ্ধ… ক্রিমিয়া দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং ক্রিমিয়ার স্বাধীনতার মাধ্যমেই শেষ হবে।
জেলেনস্কির সর্বশেষ এ বক্তব্য থেকে এটা প্রতীয়মান হয়ে যে তিনি বিশ্বাস করেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনকে অবশ্যই উপদ্বীপটি পুনরুদ্ধার করতে হবে। তবে অতীতে তিনি এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বলেছিলেন।
তিনি এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে রাশিয়া যদি ২৪ ফেব্রুয়ারির আগের অবস্থানে ফিরে যায় তবে ইউক্রেন শান্তির পথে যেতে পারে। যার অর্থ দাঁড়ায়- যুদ্ধবিরতির জন্য ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার প্রয়োজনীয় শর্ত বলে বিবেচিত হবে না।
একটি গণভোটের পর ২০১৪ সালের মার্চে ক্রিমিয়াকে নিজেদের অধিভুক্ত করে রাশিয়া। রুশ সৈন্যরা উপদ্বীপের চারপাশে বেশ কয়েকটি কৌশলগত স্থানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে তাড়াহুড়ো করে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল।
ওই বছরের শুরুর দিকে কয়েক মাসের টানা ইউরোপপন্থী বিক্ষোভের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হন ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি মস্কো ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করে।
সূত্র : বিবিসি।