সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার সহপ্রযোজক তাহেরা জেনিফার ফেরদৌস সিনেমাটির নায়িকা মাহিয়া মাহির নামে শুটিংয়ে নানান অনিয়মের অভিযোগ আনেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে শুটিংয়ে নারিকেল তেল চাইলে প্রোডাকশনের ছেলে নায়িকাকে তেল দিতে দেরি হওয়ায় ওই ছেলেকে বাদ না দিলে মাহি শুটিং করবে না বলে জানান। পরে প্রযোজক বাধ্য হয় ছেলেটিকে বাদ দিতে।
অন্যদিকে, সিনেমার নায়ক জিয়াউল রোশান দাবি করেন, প্রযোজকের মধ্যে পেশাদারিত্বের কোনো ব্যাপার নেই। তিনি একজন অপেশাদার প্রযোজক। তিনি এই সিনেমার শুটিং থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত অপেশাদার আচরণ করে গেছেন, শিল্পীদের সঙ্গে যথার্থ ব্যবহার করেননি, এমনকি শুটিং ইউনিটে শিল্পীদের খাবার নিয়েও কষ্ট দিয়েছেন তিনি।
সিনেমাটি মুক্তি সামনে রেখে প্রযোজক-নায়ক-নায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বেশ সরব। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। এবার পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সিনেমাটির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। তিনি জানিয়েছেন, রোশান-মাহি মিথ্যাচার করছেন। তাদের অভিযোগ সত্য নয়।
মাহির অভিযোগ প্রসঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নির্মাতা বলেন, মাহির অভিযোগ অসত্য। প্রথমে আমিই ফেসবুকে সিনেমাটির পোস্টার শেয়ার করে প্রচারণা শুরু করি। মাহি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন সিনেমাটি আরও পরে মুক্তি দেওয়ার জন্য। তখন আমি তাকে জানিয়েছিলাম এটি এখন আর আমার হাতে নেই। আমি তাকে কখনোই বলিনি, এই সিনেমার প্রচারণা থেকে দূরে থাকতে। এসব মিথ্যা কথা। কেন তিনি এসব মিথ্যা কথা বলছেন, বুঝতে পারছি না।
মাহি ‘আশীর্বাদ’কে মানহীন ও টোকাই মার্কা একটি সিনেমা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি সিনেমাটি ভালোভাবে নির্মাণ করার। গল্পের প্রয়োজনে যা যা দরকার ছিল তার কোনো কমতি রাখিনি। টোকাই মার্কা বা কেমন হয়েছে সেটা না দেখে আসলে বলা উচিত নয়। তার কাছে কেন এমন মনে হয়েছে, বুঝতে পারছি না।
শুটিংয়ে প্রডাকশন বয় নিয়ে আসলে কী ঘটেছিল? মানিক বলেন, সেদিন অনেক বৃষ্টি ছিল। আমরা ঘাসে শুটিং করছিলাম। মাহির খুবই এলার্জি সমস্যা আছে। বিষয়টি আমার সামনে ঘটেনি। কিন্তু আমি জেনেছি যে, মাহির সহকারী ওই (প্রডাকশন বয়) ছেলের কাছে তেল চেয়েছিল। ছেলেটি বলেছিল, তিনি খাবার নিয়ে যাচ্ছে এখন পারবে না। এতে মাহি অপমান বোধ করেছে। বিষয়টি আমাকে জানিয়ে অনুরোধ করে এই ছেলে থাকলে তিনি শুটিং করবে না। পরে সিনেমার স্বার্থে প্রযোজককে অনুরোধ করে ছেলেটিকে বাদ দিয়ে শুটিং করি। না-হলে আমি ফেঁসে যেতাম। এ ছাড়া উপায় ছিল না।
যোগ করে ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমার এই নির্মাতা বলেন, একটি সিনেমার প্রাণ প্রযোজক। প্রযোজক-পরিচালকরাই একজন শিল্পী তৈরি করেন। তাদের দ্বারা একজন শিল্পী তৈরি হয়। প্রযোজক শুটিংয়ে আসতে পারবে না মাহি কেন বলেছেন আসলে আমি জানি না। প্রযোজক তার সিনেমার শুটিং দেখতে আসতেই পারেন। মাহি সময়মতো তার প্রাপ্য কনভেন্স পেয়েছেন। তার সব ধরনের চাহিদা আমরা পূরণ করার চেষ্টা করেছি।
রোশানের অভিযোগ প্রসঙ্গে মানিক বলেন, রোশানের এই অভিযোগ সঠিক না। আমরা যেহেতু পেয়েছি তারাও পেয়েছে। পানি তালাবদ্ধ করে রাখার কথাও সত্য নয়। বিষয়টি আজই প্রথম শুনলাম। প্রযোজক আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। তাদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পেয়েছে। আসছে ১৯ আগস্ট প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও এক সপ্তাহ পিছিয়ে ২৬ আগস্ট মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন মানিক।
সবশেষে এই নির্মাতা বলেন, সিনেমার গল্পটি অত্যন্ত সুন্দর। এই সুন্দর গল্পটি আমি চেষ্টা করেছি সেলুলয়েডে নিয়ে আসতে। আমার ধারনা গল্পটি সবার মন ছুঁয়ে যাবে। সবাই প্রেক্ষাগৃহে এসে সিনেমাটি দেখুন। ‘আশীর্বাদ’ আপনাদের আশীর্বাদে রাখুন।
সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন কাজী হায়াৎ, রেহানা জোলি, রেবেকা, শাহনূর, অরণ্য বিজয়, হারুন রশিদ, সায়েম আহমেদ, সীমান্ত, শিশুশিল্পী জেনিলিয়া, আরিয়ানসহ অনেকে।