আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি বলে জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু তিনি কী স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন? অবশ্যই তার কর্মকাণ্ডে সেটি প্রমাণ হয় না। যদি তিনি সত্যি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি আইন করে খুনিদের রক্ষা করতেন না।
তিনি বলেন, জিয়া যদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকে তাহলে তিনি খুনিদের বিচার কেন করেননি? তাদের বিচার করতে তার কী সমস্যা ছিল? তিনি উল্টো তাদের পুরস্কৃত করেছিল। তাদের রাষ্ট্রদূত বানিয়েছিল।
সোমবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ আয়োজিত কেআইবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, জিয়া ৭৫ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর যারা রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী এবং গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। কুখ্যাত রাজাকারের প্রধান গোলাম আযমকে তিনি দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। জামায়াতে ইসলামী যারা যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিল তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান জিন্দাবাদের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ নিয়ে এসেছিল। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। যে ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে একটি ৭ মার্চের ভাষণ। একজন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি কখনো এ কাজগুলো করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির জন্ম হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দিয়ে। তারা এখনো এ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে। তারা কখনো চায় না দেশের মানুষ ভালো থাকুক। তারা শুধু চায় যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যেতে। তারা এখন দেশ-বিদেশ সবখানে ষড়যন্ত্র করে। তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাদের নেতারা সব সময় মিথ্যাচার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। তিনি হঠাৎ ১৫ আগস্ট কেক কাটা শুরু করেন। এর কারণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী। গোটা জাতির শোকের ও বেদনার দিনে তারা আনন্দ করে। কারণ বঙ্গবন্ধু এ দেশকে স্বাধীন করেছেন আর খালেদা জিয়া পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি। তিনি স্বাধীনতা চায়নি। ১৯৮৪ সালে যখন খালেদা জিয়া বিএনপির নেত্রী হন তখন তার বাবা তৎকালীন পত্রিকা ‘নিপুন’-এ সাক্ষাৎকারে বলেছেন ১৯৪৫ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলো ৫ সেপ্টেম্বর, সেদিন খালেদা জিয়া জন্মগ্রহণ করেছিল। কতটা খারাপ মন মানসিকতার হলে এভাবে কারো শাহাদাতবার্ষিকীতে মানুষ আনন্দ উল্লাস করতে পারে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ১৫ আগস্ট আমাদের জীবনে শুধু ক্ষতের সৃষ্টি করেনি। এ দিন আসলে আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, যে মানুষটা আমাদের বীরের জাতি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় গুলো কারাগারে কাটিয়েছেন সে মানুষকে তার সন্তানেরা আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করতে পারে। এটি ছিল অকল্পনীয়। যা সাধারণ মানুষের চিন্তা ছিল না কিন্তু খুনিদের মধ্যে ছিল। কতটা জঘন্য হলে তারা সেদিন ১০ বছরের ছোট্ট শেখ রাসেলকেও বাঁচতে দেয়নি। এটি ছিল ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড।
তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচানোর সব চেষ্টাই করেছে জিয়া। তাদের রক্ষায় জিয়া ইনডেমনিটি আইন জারি করেছিলেন। জিয়া দেশের সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি জঘন্যতম এক অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এরশাদ ও খালেদা জিয়াও খুনিদের বাঁচানোর সব আয়োজন করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আগমনের মধ্য দিয়ে তিনি খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে এসেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ অসাংবিধানিক সামরিক আইন বাতিল করা হয়। কিন্তু অপপ্রচারকারীরা এর আগে বলেছিল এটি জটিল আইন, বাতিল করা সম্ভব না। তারা চায়নি কখনো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হোক।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেছিলেন আমরা ভিক্ষার জাতি হয়ে বাঁচতে চাই না। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। সে জন্যই পাকিস্তানের আইএসআই এজেন্ট এর সঙ্গে দেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিরা আঁতাত করে জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। তারা চায়নি দেশ কখনো উন্নত হোক। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খুনিদের বিচার হয়েছে। কয়েকজন পলাতক আছে, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের তৈরি হতে হবে। জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে সবাইকে এক হয়ে কাজ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অশুভ শক্তির উত্থান করে নিজেদের ফায়দা লুটতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং সবাইকে একসঙ্গে এদের প্রতিহত করতে হবে। বর্তমানে সারা বিশ্বেই সংকট চলছে। এ সংকট আর বেশিদিন থাকবে না। আমরা আরও উন্নত ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাব। কেউ যদি দেশে খুনের রাজনীতি করে তাদের আমরা উপযুক্ত জবাব দেবো। আমরা আর হারাতে চাই না। আমরা অনেক হারিয়েছি। যারা আমাদের ওপর আঘাত আনতে চায় তাদের বলবো এটা ১৯৭৫ সাল না, এটা ২০২২ সাল। কেউ যদি বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে চায় তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।