চার বছর পরপর বিশ্বকাপ আর কিছু মহাদেশীয় আসর ছাড়া ফুটবলের উত্তেজনা মূলত ক্লাবভিত্তিক। বছর জুড়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে বুঁদ থাকে ফুটবল বিশ্ব। ক্রিকেটও এখন সেই পথে পা বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন কপিল দেব। শঙ্কা নিয়ে ভারতীয় এই কিংবদন্তি আইসিসিকে আহবান জানাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রক্ষায় উদ্যোগ নিতে।
মূলত একের পর এক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের আর্বিভাবেই কপিলের এই দুর্ভাবনার কারণ। আইপিএল, বিগ ব্যাশ, পিএসএল, টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট, সিপিএল, বিপিএল, এলপিএল তো ছিলই। নতুন করে ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের লিগ ও দক্ষিণ আফ্রিকার লিগ। দুটিই শুরু হবে আগামী জানুয়ারিতে।
আইসিসিও বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোকে। আইসিসির আগামী ভবিষ্যৎ সফর সূচিতে আইপিএলের জন্য আলাদা ‘উইন্ডো’ দেওয়া হচ্ছে। সেই আড়াই মাসে বিশ্বের কোথাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হবে না। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সময় সেই দেশগুলি খেলবে না কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বলে মনে করেন কপিল। ভারতের স্বাধনীতার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিডনিতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি নিজের শঙ্কার কথা শোনালেন সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ও দা এইজ-কে।
“আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্রমে মলিন হয়ে যাচ্ছে। আইসিসির এখন আরও অনেক বড় দায়িত্ব খেলাটাকে রক্ষা করার। এটা তো ইউরোপিয়ান ফুটবলের মতো হয়ে যাচ্ছে। ফুটবলে দেশের সঙ্গে দেশ খুব একটা খেলে না, চার বছরে একবার খেলে। ক্রিকেটেও কি এরকম হচ্ছে, শুধু বিশ্বকাপ হবে আর বাকি সময়টায় ক্লাব ক্রিকেট?”
“ক্রিকেটাররাও কি দিনশেষে শুধু আইপিএল, বিগ ব্যাশ বা এরইরকম লিগে খেলবে? আইসিসিকে তাই আরও সময় নিয়ে দেখতে হবে, তারা কীভাবে ওয়ানডে ক্রিকেট ও টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটকে রক্ষা করতে পারে, শুধু ক্লাব ক্রিকেট নয়।”
ভারত ছাড়া বিশ্ব ক্রিকেটে শীর্ষ তারকাদের প্রায় সবাই এর মধ্যে নাম লিখিয়েছেন আমিরাতের লিগে ও দক্ষিণ আফ্রিকার লিগে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা আইপিএলের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি খেলার অনুমতি পান না। তবে ভারতে ও বিশ্বজুড়ে অনেক ক্রিকেটারের এখন লক্ষ্য থাকে আইপিএল বা এই ধরনের টুর্নামেন্টে খেলা। আগে যেখানে দেশের ক্রিকেট ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য সাধারণত থাকত না।
ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ও সর্বকারের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন কপিল মনে করেন, ক্রমেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাস্তবতা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
“ক্লাব ক্রিকেট কিছু সময়ের জন্য হলে ঠিক আছে। ধরলাম, বিগ ব্যাশ ঠিক আছে। কিন্তু এখন দক্ষিণ আফ্রিকার লিগ আসছে, আমিরাতের লিগ আসছে। সব দেশই নিজেতের ক্লাব ক্রিকেট আনছে। তাহলে তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুধু দেখা যাবে বিশ্বকাপেই।”