দেশ উন্নয়ন হচ্ছে, হচ্ছে সড়কেরও উন্নয়ন। কিন্তু থামছেনা সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিনিয়ত মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। পত্রিকার পাতা খুললে কিংবা টিভি চ্যানেলের সংবাদের দিকে চোখ রাখলে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হওয়ার খবর। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে সরকার সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সালে প্রণয়ন করে। কিন্তু চার বছরেও প্রণয়ন হয়নি বিধিমালার। আইনের সঠিক বাস্তবায়নে সড়ক পরিবহন বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন আবশ্যক। বুধবার ১৭ আগস্ট সকাল ১১ টায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, স্বাস্থ্য সেক্টরের সভাকক্ষে সড়ক পরিবহন বিধিমালার দ্রুত প্রণয়নের দাবীতে সাংবাদিকদের সাথে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসোর্চের বাংলাদেশ পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরীসহ সাংবাদিকবৃন্দ ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেইফটি প্রকল্পে কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভার আলোচক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে বর্তমান যে আইনটি আছে তার অনেক দুর্বল দিক রয়েছে যার ফলে এর সঠিক বাস্তবায়ন বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আবার যাও বাস্তবায়ন করা সম্ভব তাও সম্ভব হচ্ছেনা। কারণ এ সংক্রান্ত বিধিমালা এখনোও পর্যন্ত প্রণয়ন হয়নি। বর্তমান সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আইনে দুর্বল দিকগুলো নিরসন করা দরকার। আর এই মুহুর্তে বর্তমান আইনের বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন একান্ত জরুরী।
সভার সভাপতি ইকবাল মাসুদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে আমাদের প্রত্যাশিত লক্ষ্যে এখনো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। আইনের দুর্বল দিক, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া, উপযুক্ত আইন প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের বাঁধা, সরকারের সদিচ্ছা ও আমাদের সচেতনতার অভাবের কারণে সড়ক দুর্ঘটনারোধ করা যাচ্ছেনা। তিনি আরোও বলেন, দেশের যে কোন উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমি অন্যতম ও অনস্বীকার্য। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়নে গণমাধ্যম যেভাবে এগিয়ে এসেছিলো ঠিক একইভাবে গণমাধ্যম এগিয়ে আসলে বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন হবে।
মুল বক্তা ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেইফটি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান তার প্রবন্ধে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ টি রিস্ক ফ্যাক্টর, সড়ক দুর্ঘটনার আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপট, আইনের দুর্বল দিক ও বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এসময় তিনি গত কয়েক মাসের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। শুধুমাত্র গত জুলাই মাসেই দেশে ৬৩২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৩৯ জন নিহত এবং ২ হাজার ৪২ জন আহত হয়। অন্যদিকে এপ্রিল মাসে ৪২৭ টি দুর্ঘটনায় ৮১ জন শিশুর মৃত্যু হয়। যা আমাদেরকে ভাবায়। তবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার হার ও মৃত্যু বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। যার মধ্যে অন্যতম হলো বিধিমালার দ্রুত প্রণয়ন।
সভায় দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার জামিউল আহসান শিপু, দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার সিরাজুল ইসলাম, কালেরকন্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি রেজওয়ান বিশ্বাস, দি বাংলাদেশ টুডের নিউজ এডিটর সাইফুল ইসলাম, যায়যায়দিন পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি গফফার খান চৌধুরী, দেশ রূপান্তর পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি ইমন রহমান, মানবজমিনের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শুভ্র দেব, জনকন্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি ফজলুর রহমান, ভোরের কাগজের নিজস্ব প্রতিনিধি ইমরান রহমান, আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি মারুফ কিবরিয়া, প্রতিদিনের সংবাদের নিজস্ব প্রতিনিধি আরমান ভুইয়ান, ঢাকাপোস্টের নিজস্ব প্রতিনিধি মনি আচার্য্য, জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিনিধি তৌহিদুজ্জামান তন্ময়, ডেইলি অবজারভার পত্রিকার বিজনেস রিপোর্টার শেখ আতিকুর রহমান, মুসলিম টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার শিকদার মুরাদ, বার্তা প্রবাহের ইব্রাহিম রহমান রবিন ও বাংলা টাইমসের স্টাফ রিপোর্টার হাফিজুর রহমান, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেইফটি প্রকল্পের এ্যাডভোকেসি অফিসার (পলিসি) ডাঃ তাসনিম মেহবুবা বাঁধন ও এ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন) তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।