সর্বশেষ সভায় আগামী ৪ বছরের ফিউটার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি) চূড়ান্ত করেছিল আইসিসি। গতকাল ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এফটিপি ঘোষণা করেছে ক্রিকেটের শাসক সংস্থাটি। নতুন সূচিতে আগামী চার বছর ব্যস্ত সময় পার করবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। নতুন সূচিতে টাইগাররা সব মিলিয়ে ১৫০টি বাইলেটারাল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে। এর মধ্যে টেস্ট ৩৪, ওয়ানডে ৫৯ ও টি-২০ ৫৯টি। চার বছরের সূচিতে ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ সব মিলিয়ে বাইলেটারাল আন্তর্জাতিক খেলবে ৭৭৭টি। যাতে রয়েছে টেস্ট ১৭৩, ওয়ানডে ২৮১ ও টি-২০ ৩২৩টি। গত এফটিপিতে মোট খেলা ছিল ৬৯৪টি।
চার বছরের নতুন সূচিতে সবচেয়ে বেশি বাইলেটারাল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সর্বমোট ১৫০টি বাইলেটার ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। এরপর যথাক্রমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪৭, ইংল্যান্ড ১৪২, ভারত ১৪১, নিউজিল্যান্ড ১৩৫, অস্ট্রেলিয়া ১৩২, শ্রীলঙ্কা ১৩১, পাকিস্তান ১৩০, আফগানিস্তান ১২৩, দক্ষিণ আফ্রিকা ১১৩, আয়ারল্যান্ড ১১০ ও জিম্বাবুয়ে ১০৯টি ম্যাচ খেলবে। সবচেয়ে বেশি বাইলেটারাল টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৩। এরপর খেলবে ভারত ৬১, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ৫৭টি, পাকিস্তান ৫৬, শ্রীলঙ্কা ৫৪, ইংল্যান্ড ৫১, অস্ট্রেলিয়া ৪৯, আয়ারল্যান্ড ৪৭, দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৬ ও জিম্বাবুয়ে ৪৫ ম্যাচ। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বাইলেটেরাল আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। ৫৯টি ওয়ানডে খেলবে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কা ৫২, আয়ারল্যান্ড ৫১, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৮টি, পাকিস্তান ৪৭, নিউজিল্যান্ড ৪৬, আফগানিস্তান ৪৫, জিম্বাবুয়ে ৪৪, অস্ট্রেলিয়া ৪৩, ভারত ৪২ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৯ ম্যাচ খেলবে। নতুন সূচিতে সবচেয়ে বেশি বাইলেটারাল টেস্ট খেলবে ইংল্যান্ড ৪৩, অস্ট্রেলিয়া ৪০, ভারত ৩৮, বাংলাদেশ ৩৪, নিউজিল্যান্ড ৩২, দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮, পাকিস্তান ২৭, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৬, শ্রীলঙ্কা ২৫, আফগানিস্তান ৩১, জিম্বাবুয়ে ২০ ও আয়ারল্যান্ড ১২টি টেস্ট খেলবে।
নতুন সূচিতে খুশি বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী, ‘২০২৩-২০২৭ এফটিপি বাংলাদেশের জন্য ভালো সুখবর এনেছে। আমরা সবগুলো দলের বিপক্ষে ভালো পরিমাণে ম্যাচ পেয়েছি। বিসিবি সব সময়ই বিশ্বাস করে, এফটিপি হচ্ছে আন্তর্জাতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে ম্যাচ ভাগাভাগি করার প্রক্রিয়া। আমরা নতুন এফটিপিতে বেশি ম্যাচ পাওয়ায় খুশি। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই চেয়েছিলাম বড় দলগুলো বিপক্ষে আমরা যেন নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই। এবার সেটা হয়েছে। এতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক উন্নতির দুয়ার খুলে গেছে।’
দ্বি-পক্ষীয় সিরিজের বাইরে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট, মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট তো রয়েছেই। সঙ্গে সুযোগ পেলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার উন্মুক্ত দুয়ার তো খোলাই। এফটিপিতে ম্যাচের সংখ্যা বাড়ায় নীতিনির্ধারকদের মুখে হাসি থাকলেও ক্রিকেটারদের কথা ভেবে কিছুটা শঙ্কাও বিরাজ করছে। আগে কখনোই এত ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। তাই সামনের চার বছরে কঠিন সময় পার করতে হবে মিরাজ, লিটন, সোহানদের। পারবেন তো তারা?
গত মাসে আইসিসির বোর্ড সভায় এফটিপি চূড়ান্ত হয়। আইসিসির বোর্ড সভা ও নিজের ব্যক্তিগত কাজ সেরে ৩১ জুলাই দেশে ফিরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এফটিপি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সঙ্গে নিজের শঙ্কার কথাও জানান এভাবে, ‘এফটিপি যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, যে পরিমাণে খেলা আছে, আমার মনে হয় এখন আমাদের দুঃশ্চিন্তার বিষয় খেলবো কীভাবে? এত ম্যাচ খেলা আসলেও কঠিন। এত বেশি ম্যাচ খেলবো কীভাবে?’
তবে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন অতদূর ভাবছেন না। তার ভাবনা, ‘চার বছরে কি হবে, কি হবে না এসব নিয়ে না ভেবে আগামী এক বছরে আমরা কতোগুলো ম্যাচ খেলবো, কাদের নিয়ে খেলবো, কিভাবে খেলবো, কোথায় খেলবো এসব নিয়ে চিন্তা করা উচিত। সেভাবেই পরিকল্পনা করা উচিত। এফটিপিতে ম্যাচ বেড়েছে এটা অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো খবর। ছেলেরা ম্যাচ খেলার বেশি সুযোগ পাবে। কিন্তু এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে। আমাদের দীর্ঘ পরিকল্পনার পরিবর্তে ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরি করে আগানো উচিত হবে।’