ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি আর সরবরাহ উদ্বেগ প্রশমনে রাশিয়া থেকে পেট্রোল এবং জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা করছে সেনা-শাসিত মিয়ানমার। বৈশ্বিক তীব্র জ্বালানি সংকটের মাঝে অন্যান্য কিছু দেশের মতো মিয়ানমার এই পরিকল্পনা করছে বলে জান্তা সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছর নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করায় পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার কবলে রয়েছে মিয়ানমার। অন্যদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের নামে আগ্রাসন চালানোর দায়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা উভয় দেশের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
রাশিয়ার জ্বালানি তেলের অন্যতম বৃহৎ গন্তব্য ইউরোপ হলেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় ওই অঞ্চলে মস্কোর জ্বালানি রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। যে কারণে রাশিয়া এখন এশিয়ায় তার জ্বালানির নতুন নতুন গ্রাহক খুঁজছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জ্য মিন তুন বলেছেন, আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে পেট্রোল আমদানির অনুমতি পেয়েছি। রাশিয়ার প্রেট্রোলের মান এবং তুলনামূলক কম দামের কারণে মিয়ানমার আমদানির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের সরবরাহ মিয়ানমারে পৌঁছাতে শুরু করবে। জ্য মিন তুন বলেছেন, গত মাসে রাশিয়া সফরের সময় তেল এবং গ্যাসের বিষয়ে আলোচনা করেন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং। মিয়ানমার এখন সিঙ্গাপুরের মাধ্যমে জ্বালানি আমদানি করছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথ তেল অনুসন্ধানের বিষয়টি মিয়ানমার বিবেচনা করবে। জান্তা
প্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের ঘনিষ্ঠ একজন মিত্রের নেতৃত্বে মিয়ানমারের সরকার রাশিয়ার তেল কেনা বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করেছে।
বুধবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতি অনুযায়ী, এই কমিটি মিয়ানমারের চাহিদার ভিত্তিতে যৌক্তিক মূল্যে রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়, আমদানি এবং পরিবহন কাজ তত্ত্বাবধান করবে।
জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক অস্থিরতা আর নাগরিক গণঅসন্তোষের মাঝে মিয়ানমারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারণের মাঝে নতুন করে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জ্বালানির সংকটের কারণে দেশটির সরকার লোড শেডিং ঘোষণা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিয়ানমারে প্রত্যেক লিটার পেট্রোলের দাম প্রায় সাড়ে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ কিয়াটে (বাংলাদেশি প্রায় ১০৪ থেকে ১২২ টাকা) দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সংকটের কারণে গত সপ্তাহে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে অনেক পেট্রোল স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর কাছে অস্ত্রের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী রাশিয়া।