বাংলাদেশে অনিবাসী হিসেবে মূসক (ভ্যাট) নিবন্ধন নেয়া কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বাড়ছে, যার সঙ্গে বাড়ছে ভ্যাট আদায়। কোম্পানিগুলো নিবন্ধন নেয়ার পর ১৫ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে এক বছর দুই মাস ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করেছে । এ সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করেছে প্রায় ৪৪২ কোটি টাকা। এ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। অনিবাসী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যবসা ও ভ্যাট পরিশোধে এগিয়ে রয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট।
বহুজাতিক বিনোদনধর্মী প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স নিবন্ধন নেয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো ভ্যাট দিয়েছে। এছাড়া আমাজনের দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জুন থেকে রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট দেয়া শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাটের পাশাপাশি নিয়মিত ভ্যাট রিটার্নও দাখিল করছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বহু বিজ্ঞাপন বিল ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে পরিশোধ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, অনিবাসী হিসেবে নিবন্ধন নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন মূসক আইন জটিলতা তৈরি করে। এতে প্রথম অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারেনি এনবিআর। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও ভ্যাট নেয়া সম্ভব হয়নি। অবশেষে দুই বছর চেষ্টার পর এনবিআর অনিবাসী নিবন্ধন দেয়া শুরু করে। প্রথম অবস্থায় ২০২১ সালের ২৩ মে নিবন্ধন দেয়া হয় বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট গুগলের দুটি প্রতিষ্ঠানকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট ও সফটওয়্যার সেবাদানকারী বহুজাতিক কোম্পানি গুগল দুটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো গুগল এশিয়া প্যাসিফিক পিটিই লিমিটেড ও গুগল আয়ারল্যান্ড লিমিটেড। ২৭ মে নিবন্ধন নেয় ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে আন্তর্জাতিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস লিমিটেড। সম্প্রতি আমাজন ডটকম সার্ভিসেস এলএলসি ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। ১৬ জানুয়ারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেয় ফেসবুক। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড, ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড।
১ জুলাই নিবন্ধন নেয় মাইক্রোসফট করপোরেশনের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট রিজিওনাল সেলস পিটিই লিমিটেড। সর্বশেষ নিবন্ধন নেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও প্রযোজনা সংস্থা নেটফ্লিক্স। অনিবাসী হিসেবে এই পর্যন্ত ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট থেকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুগল এশিয়া প্যাসিফিক পিটিই লিমিটেড ২০২১ সালের মে মাসে মাসিক দাখিলপত্র (ভ্যাট রিটার্ন) ও ভ্যাট পরিশোধ করে। আর ফেসবুক ২০২১ সালের জুন থেকে ভ্যাট পরিশোধ ও রিটার্ন জমা দিয়ে আসছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে নেটফ্লিক্স ও সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয় আমাজন ডটকম সার্ভিসেস এলএলসি।
ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের হিসাবমতে, নিবন্ধন নেয়ার পর গত ১৪ মাসে (২০২১ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আয়ের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিয়েছে ফেসবুক। এ সময় ফেসবুকের তিনটি প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন থেকে বাংলাদেশে ২১৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছে। যার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়েছে ৩২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড ভ্যাট রিটার্নে একাই আয় দেখিয়েছে ২১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা; যার ওপর ভ্যাট দিয়েছে ৩২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ৪০ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ৬ লাখ টাকা ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড ৩৩ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে।
হিসাবে আরও দেখা গেছে, বিজ্ঞাপন থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করেছে অনিবাসী হিসেবে নিবন্ধন নেয়া গুগলের দুটি প্রতিষ্ঠান। দুটি প্রতিষ্ঠান ১৪ মাসে ভ্যাট রিটার্নে আয় দেখিয়েছে ১৪৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এই আয়ের বিপরীতে ভ্যাট দিয়েছে ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুগল এশিয়া প্যাসিফিক পিটিই লিমিটেড ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছে; যার বিপরীতে ভ্যাট দিয়েছে ২১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর গুগল আয়ারল্যান্ড লিমিটেড ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা দেখিয়ে ভ্যাট দিয়েছে ৫২ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ আয় করেছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি ১৪ মাসে আয় দেখিয়েছে ৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যার বিপরীতে ভ্যাট দিয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর ৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস লিমিটেড। আমাজন ডটকম সার্ভিসেস এলএলসি জুন মাসে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ভ্যাট দিয়েছে ২৪ লাখ টাকা। নেটফ্লিক্স ১৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ভ্যাট দিয়েছে দুই কোটি ২৩ লাখ টাকা।
ভ্যাট ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ফেসবুক, গুগল, আমাজন ও নেটফ্লিক্সের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশ। আর মাইক্রোসফটের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে পোদ্দার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট।