কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কালিয়াকৈর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে একমাত্র সরকারী হাই স্কুলের ভিতরে বছরের পর বছর ধরে চলছে অবৈধ একটি কিন্ডারগার্ডন স্কুল। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা অর্থও। সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ কয়কজন মিলে ওই কিন্ডারগার্ডেন রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় লোকজন।
এলাকাবাসী, স্কুল কতৃপক্ষ ও শিক্ষার্থী-অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চদ্রা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী হাই স্কুলের ভিতর এমন ঘটনা ঘটেছে। গত ১৯৯৮ সাল স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১০ সালে সেটা এমপিও ভুক্ত করণ করা হয়। এরপর ২০১৬ সাল জাতির পিতার নাম এ স্কুলটি সরকারী করণ করে আওয়ামীলীগ সরকার। কি অতিরিক্ত লাভের আশায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার দাস ও সহকারী শিক্ষক বশির উদ্দিনসহ কয়কজন মিলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্কুল নামে আরকটি কিন্ডারগার্ডেন খুলেন। গত ২০০৫ সাল থেকে সরকারী হাই স্কুলের ভিতরেই অবৈধভাবে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলটি চলছে। হাটিহাটি পা পা করে জাতির পিতার নামে ওই হাই স্কুলটি এমপিও ভুক্ত ও সরকারী করণ করা হলেও সরানো হয়নি অবৈধ কিন্ডারগার্ডেনটি। এতে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার একমাত্র সরকারী হাই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। এরপরও বছরের পর বছর ধরে ওই সরকারী স্কুলের ভিতরে অবৈধভাবে কিন্ডারগার্ডেনটি পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের আরো আকর্ষণ বাড়াতে স্কুল ড্রেস অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ওই সরকারী হাই স্কুলের নাম ও মনোগ্রাম। অদক্ষ্য ছয়জন শিক্ষক দিয়ে কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কি সেটাও আর্থিক হিসাব-নিকাশ দেখন ওই সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার দাস। বর্তমান ওই কিন্ডারগার্ডেন স্কুল প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী আছে। তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে মোট ৭৫ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও ভর্তি ফি বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সেশন ফি বাবদ প্রতি বছর ৫০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আদায় করে কিন্ডারগার্ডেন কতৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের গলাকাটা ওই টাকার ভাগ যাচ্ছে ওই সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার দাস, সহকারী শিক্ষক বশির উদ্দিনসহ কয়কজন সরকারী শিক্ষকের পকেটেও। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারী স্কুলের ভিতর কখনো অবৈধভাবে কিন্ডারগার্ডেন স্কুল চলতে পারে না। তার উপর জাতির পিতার নামর সরকারী হাই স্কুল। সরকারী স্কুলের শিক্ষকরা কিভাব ওই কিন্ডারগার্ডেন স্কুল চালাচ্ছেন? সরকারী বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা পেলেও তারা অবৈধ কিন্ডারগার্ডেনের অর্থ ভাগভাটড়া করে নিচ্ছেন।
একই টেইলার্সে স্কুল ড্রেস বানানোর ফলে একই হয়েছে স্বীকার করে ওই কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সাজেদা বেগম, হোসনে আরা, রেবেকা সুলতানা, শারমিন বেগম, দীপালী রায় জানান, যখন হাই স্কুলটি বসরকারী ছিল, তখন থেকে কিন্ডারগার্ডেনটি চালু। কি এমপিও ভুক্ত এবং সরকারী করণ হওয়ার পর কতৃপক্ষ বন্ধ না করায় কিন্ডারগার্ডেনটি এখনো চলছে।
এ ব্যাপারে ওই সরকারী হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক বশির উদ্দিন জানান, ওই স্কুলটি আগে থেকে চলছে। এখন সেটাকে সরকারী প্রাথমিক স্কুল বানানার চেষ্টা করবো। ওই সরকারী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার দাস জানান, এ হাই স্কুল সরকারী করণ হওয়ার আগে থেকে ওই স্কুলটি চলছে। জাতির পিতার নাম ওই স্কুলটি হওয়ায় আমরাও আর কিছু বলি নাই। এছাড়া ওই স্কুলের হিসাব-নিকাশ রাখলেও সেখান থেকে কানা টাকা-পয়সা আমরা রাখি না। তবে উনারা আমাদের সরকারী স্কুলের ক্যাম্পাস ব্যবহার করছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির মোল্লা জানান, সরকারী স্কুলের ভিতর কিন্ডারগার্ডেন স্কুল আছে, সেটা আমার জানা নেই। তবে সরকারী স্কুলের ভিতর কিন্ডারগার্ডেন স্কুল থাকার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, সরকারী স্কুলের ভিতর কিন্ডারগার্ডেন স্কুল চলানোর বিষয়টি জানা ছিল না। তবে বিষয়টি খোজ নিয়ে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।