রাকিবুল হাসান রাকিব, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাট-ক্ষেতলাল-পাকারমাথা মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত তিনটি এবং কালাই-শালাইপুর-হিলি রোডে দু’টি ব্রিজ। এই পাঁচটি ব্রিজের মধ্যে চারটি বেইলিব্রিজ অত্যন্ত জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ।
সুরু ও জোড়াতালি দেয়া এইসব বেইলিব্রিজ দিয়ে চলছে প্রতিদিন শত শত ভারি যানবাহন। বিশেষ করে জয়পুরহাট-ক্ষেতলাল-পাকারমাথা সড়কের বেইলিব্রিজ ৩টি খুব জরাজীর্ণ ও জোড়াতালি থাকায় মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সেতুগুলোর পাটাতনের লোহার পাতগুলো জং ধরে নষ্ট হওয়ায় বেইলিব্রিজের পাটাতন ফাঁকা হয়ে গেছে । এতে করে যানবাহন চলাচলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ফাঁকা জায়গাগুলোতে বারবার লোহার পাত দিয়ে ঝালাই দেওয়াই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ট্রাকসহ ভারি যেকোন যানবাহন উঠা মাত্র বিকট শব্দসহ ভয়ঙ্করভাবে দুলতে থাকে, এমন অবস্থাতেই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গরু বোঝাই ট্রাক, ভুটভুটি এবং মাল বোঝায় সাধারণ যানবাহন চলাচল করছে এই সড়কে।
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নব্বইদশকে জয়পুরহাট-ক্ষেতলাল-পাকারমাথা সড়কের তুলসীগঙ্গা নদীর ওপর ৬৮ মিটার, খাড়াই খালের ওপর ২০ মিটার এবং ঘোনাপাড়া খালের ওপর ৩৬ মিটার দীর্ঘ তিনটি বেইলি সেতু নির্মিত হয়।সড়কটি প্রথমদিকে শুধুমাত্র জয়পুরহাট শহরের যোগাযোগের বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হতো ফলে এর গুরুত্ব কম ছিলো। বর্তমানে জয়পুরহাট থেকে বগুড়া মহাসড়কের অনেক যানবাহন শহরের যানজট এড়াতে এই রোড ব্যবহার করছে। তাছাড়া প্রতি শনিবার জয়পুরহাট ও প্রতি মঙ্গলবার পাঁচবিবিতে জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে। এ দুইদিন এসব সেতুর ওপর দিয়ে গরু বোঝাই ট্রাক ও ভটভটি অনেক বেশি চলাচল করে।
এছাড়াও আক্কেলপুর হয়ে নওগাঁ শহরে মালামালসহ ট্রাক যাতায়াত করে জেলার এই সড়কেই। একইভাবে কালাই-শালাইপুর-হিলি সড়কের ৪৪ মিটার দীর্ঘ সরু বেইলি সেতুর অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প তেমন কোন পথ না থাকায় এ পথেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শত শত হালকা ও ভারি যানবাহন।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রিজ গুলোর বোহাল দশা।এতে করে যানবাহন চলাচলের যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমনি দূর্ঘটনার আশংকা থেকে যাচ্ছে।এ অবস্থায় দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যানবাহন তো দূরে থাকলো হেঁটে যেতেও পায়ে জখম হয়। প্রায়ই পা ফাঁকা স্থানে ঢুকে গিয়ে রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। আবার মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য আরো বিপজ্জনক। মাঝখানে মাঝখানে লোহার পাতগুলো ফাঁকা বড় হওয়ার কারণে চাকা অনেক সময় ফাঁকার মধ্যে ঢুকে যায় এবং তারা আহত হয়। কিছুদিন পূর্বেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে।
জয়পুরহাট-ক্ষেতলাল সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী জয়পুরহাটের দুলাল হোসেন নামের এক ট্রাক ড্রাইভার বলেন, তিনি যখন ব্রিজে ওপর বোঝাই গাড়ি নিয়ে ওঠেন প্রচন্ড শব্দ ও নড়তে থাকে গোটা ব্রিজ, এতে তার ভয় লাগে কারণ যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরো বলেন, এই ব্রিজগুলোর কারণে তিনি সময় মতো মালামাল পৌঁছে দিতে পারেন না। সেতুগুলো সরু হওয়ায় একই সাথে দু’পাশের গাড়ি চলাচল করা যায় না, এক পাশে করলে অন্য পাশের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। এতে লম্বা যানজট সৃষ্টি হয় এবং সময় নষ্ট হয়।
মোটর সাইকেল আরোহী আল মামুন বলেন আমি ব্রিজের উপরে ওঠার পর আমি ভয়ে পেয়ে গেছিলাম।এই ব্রিজে চলাচল করা খুবই বিপদ জনক।আমি কতমপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটার আগেই ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হবে।
ঘোনাপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিলের ছেলে মুমিন বলেন, সেতুটি পুরাতন হওয়ায় দশ টনের অধিক ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং উভয় পাশে সাইনবোর্ডও দেন কিন্তু কেউ মানছে না এই নির্দেশনা। ২০ টনেরও অধিক মাল নিয়ে ট্রাক চলাচল করছে। তিনি আরো বলেন, যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, খুব দ্রুত এগুলো পুনঃনির্মাণ করা দরকার।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, বেইলিব্রিজগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩১ জুলাই উল্লিখিত সেতুগুলোর স্থানে কংক্রিট সেতু নির্মাণে দরপত্র আহবান করা হয়েছে, যার প্রস্তাবিত মূল্য ৪৫ কোটি টাকা।খুব দ্রুত কাজ শুরু করার আশা প্রকাশ করছি।