ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ছয় মাস পূর্ণ করার পর এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিচারের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনের পাশাপাশি রুশ শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের বিরুদ্ধেও একই পরিকল্পনা করছে দেশটি।
মূলত সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যুদ্ধ শুরুর অভিযোগ এনে বিচার কাজ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা তৈরি করছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার কথিত ‘আগ্রাসনের অপরাধ’ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রশাসনের উপপ্রধান আন্দ্রি স্মিরনভের নেতৃত্বে করা হচ্ছে।
এএফপি বলছে, ক্রাইম অব অ্যাগ্রেসন বা ‘আগ্রাসনের অপরাধ’-এর সংজ্ঞা ২০১০ সালের রোম সংবিধিতে গৃহীত হয়েছিল। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নুরেমবার্গ এবং টোকিওতে বিচারে ‘শান্তিবিরোধী অপরাধ’-এর অনুরূপ ধারণাটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
গত ২০ বছর ধরে গুরুতর অপরাধের বিচার করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এই সংস্থাটি ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার তদন্ত শুরু করছে।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আগ্রাসনের অভিযোগের দিকে নজর দিতে পারবে না, কারণ ইউক্রেন বা রাশিয়া কেউই রোম সংবিধি অনুমোদন করেনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রশাসনের উপপ্রধান আন্দ্রি স্মিরনভ এএফপিকে বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করা অপরাধীদের দ্রুত জবাবদিহি করতে হবে। আর তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় এই আদালত।’
তার ভাষায়, ‘বিশ্বের স্মৃতি খুব সংক্ষিপ্ত অর্থাৎ দ্রুত সবকিছু ভুলে যায়। তাই আমি চাই এই ট্রাইব্যুনাল আগামী বছর কাজ শুরু করুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন জানে যে, বিচারের সময় অভিযুক্তরা উপস্থিত থাকবে না। তবে এই ট্রাইব্যুনাল এই লোকেদের অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি অভিযুক্তরা যেন সভ্য বিশ্বে ভ্রমণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে।’
এএফপি বলছে, ইউক্রেনীয় প্রসিকিউটররা এখন পর্যন্ত আগ্রাসনের জন্য প্রায় ৬০০ সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং ভাষ্যকারও রয়েছে। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের সরকারের স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।
আর এরপরই আদালতের সিদ্ধান্তগুলো স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর ভূখণ্ডে কার্যকর হবে। যার অর্থ যে কোনো দোষী সাব্যস্ত অপরাধীকে সেসব দেশে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে।
স্মিরনভ বলেছেন, বেশ কয়েকটি দেশ চলতি বছরের শেষের আগেই খসড়া ওই নথিতে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত এবং ‘বেশ কিছু ইউরোপীয় অংশীদার (যারা) ট্রাইব্যুনালের আয়োজন করতে ইচ্ছুক’ তাদের সাথে আলোচনা চলছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রশাসনের এই উপপ্রধান বলছেন, ‘আমরা চাই এই আদালতের সিদ্ধান্তগুলো স্বীকৃত হোক’। তার যুক্তি, আদালতের শক্তিশালী বৈধতা দরকার।
অবশ্য বেশ কয়েকটি সংস্কার সত্ত্বেও অতীতে স্বাধীনতার অভাব এবং দুর্নীতির জন্য ইউক্রেনের আদালত সমালোচিত হয়েছে। পোল্যান্ডসহ বাল্টিক দেশগুলো ইউক্রেনের নিকটতম অংশীদার হিসেবে পরিচিত এবং তারা এই প্রস্তাবগুলোকে সমর্থন করেছে। তবে জার্মানি এবং ফ্রান্স এই বিষয়ে স্বল্পমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।
অবশ্য রাজনৈতিক বিবেচনাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারে। স্মিরনভ বলেছেন, ‘কিছু দেশ, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন স্বীকার করার পাশাপাশি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনার জন্য একটি ছোট জানালা খোলা রাখার চেষ্টা করছে।’
তবে পশ্চিম ইউরোপেও ইউক্রেনের এই ধারণাটির পক্ষে ধীরে ধীরে সমর্থন দেখা যাচ্ছে। এর আগে গত ১৯ মে আগ্রাসনের অপরাধের জন্য একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।