আবারও জনগনের ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতাসীন সরকারকে ক্ষমতায় বসাতেই ১৫০ আসনে ইলেকট্রোনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে ১৯টি দল ইভিএম এর বিরোধীতা করেছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ৯টি দল আলোচনায় অংশগ্রহণই করেনি। অথচ আওয়ামী লীগ ও সমমনা মাত্র ৪ টি দল সমর্থন করার প্রেক্ষিতে অর্ধেক আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহনের কথা ঘোষণা দিয়েছে ইসি। এতে স্পষ্ট বোঝা গেছে ভোট চুরির আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছে পূরণেই এমন জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে ইসি তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।
২৬ আগস্ট শুক্রবার রাজধানীর পল্টনস্থ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আইএবি) কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত কর্মী তারবিয়তে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই বিতর্কিত হওয়ায় ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি বা কারিগরি সামর্থ্য নির্বাচন কমিশনের নেই। পাশাপাশি ভোটাররাও এই প্রক্রিয়ায় ভোট দিতে প্রস্তুত নয়। তারপরেও কেন ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে হবে? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন মতলব আছে। সেই মতলব হচ্ছে ভোট চুরির মতলব। এবারও ইভিএমের মাধ্যমে ভোট চুরি করে পুনরায় ক্ষমতায় থাকার পায়তারা করছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন যে শেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ তা আবারো প্রমাণ হলো। সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষমতা এই নির্বাচন কমিশনের নেই। সেটা নির্বাচন কমিশন নিজেই প্রমাণ করেছে। কোনোভাবেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইভিএম মেনে নিবে না। কেননা সিস্টেমটাই ত্রুটিপূর্ণ ও বিতর্কিত। এই পদ্ধতি দিয়ে কখনও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশনের হিসেবে ইভিএম ব্যবহারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের সংখ্যা রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার। কিন্তু ১৫০ আসনে একযোগে ইভিএম দিয়ে ভোট গ্রহণ করতে হলে কম পক্ষে ৫০ হাজার জনবলের প্রয়োজন হবে। এছাড়া পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মক ভোটের মাধ্যমে ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি কাজের জন্য অনেক মেশিনের প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, শুনেছি ইভিএমের জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। সরকার অনুমোদন দিলেই নতুন করে লুটপাটের একটা রাস্তা চালু হয়ে যায়। মেশিন কেনা, লোকবল নিয়োগ দেয়া, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন অযুহাতে জনগনের টাকা লুটপাট করা সহজ হবে। এতে করে নির্বাচন কমিশন ও সরকার দুপক্ষেরই লাভ। ইসি লেজুরবৃত্তি করে অর্থ কামিয়ে নিতে পারবে আর আওয়ামী লীগ ইসিকে ব্যবহার করে জনগনের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি সরকারের তল্পিবাহক হয়ে গেছে। সরকার যা চাইছে তাই তারা করছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম বলেন, ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার সিদ্ধান্ত জনবিরোধী। জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসি তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ-এর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারী মাওলানা আরিফুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারী নূরুল ইসলাম নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী ফরিদুল ইসলাম, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন পরশ, দফতর সম্পাদক মুফতী নিজাম উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক প্রভাষক ডাক্তার মুজিবুর রহমান, ছাত্র ও যুব সম্পাদক এডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার সহ নগর ও থানা নেতৃবৃন্দ।