পাকিস্তানে অতি বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় এ পর্যন্ত ৩৪৩ শিশুসহ ৯৩৭ জন নিহত হয়েছে এবং অন্তত তিন কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।
ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির (এনডিএমএ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিন্ধ প্রদেশে সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে। ১৪ জুন থেকে এখন পর্যন্ত বন্যা এবং বৃষ্টি সম্পর্কিত ঘটনার কারণে সেখানে ৩০৬ জন মারা গেছে।
বেলুচিস্তানে ২৩৪ জন মারা গেছে, খাইবার পাখতুনখোয়া ১৮৫ ও ও পাঞ্জাবে ১৬৫ জন মারা গেছে। আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭ জন নিহত হয়েছে এবং বৃষ্টিতে গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একই সময়ে ইসলামাবাদে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এনডিএমএ-এর তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে পাকিস্তানে ১৬৬ দশমিক ৮ মি.মি বৃষ্টি হয়েছে। সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল।
বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে দেশটিতে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে। সিন্ধুর ২৩টি জেলাকে ‘দুর্যোগ-বিপর্যস্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শেরি রেহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এনডিএমএ-তে একটি ‘ওয়ার রুম’ স্থাপন করেছেন, যা সারাদেশে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তিনি স্বীকার করেছেন যে অবিরাম ‘রাক্ষুসে’ বৃষ্টিপাত ‘ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন করে তুলেছে, বিশেষ করে হেলিকপ্টারে যাতায়াত’।
ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান বর্ষাকালের অষ্টম চক্রের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; সাধারণত দেশে মাত্র তিন থেকে চার চক্র (বর্ষা) বৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, পাকিস্তান একটি অভূতপূর্ব মৌসুমী বায়ুর অধীনে রয়েছে এবং ডেটা বলছে, সেপ্টেম্বরে আরেকটি চক্রের পুনঃউত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে সিনেটর রেহমান ২০১০ সালের বিধ্বংসী বন্যার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ।
তিনি জানান, ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেতু ও যোগাযোগ অবকাঠামো ভেসে গেছে। প্রায় তিন কোটি মানুষ আশ্রয়হীন। তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং তাদের খাবার নেই।
আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে ত্রাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রদেশগুলো জানিয়েছে আশ্রয় ও ত্রাণের প্রয়োজনীয়তা প্রবল।
তার ভাষ্য, পরিস্থিতি এখনও ক্রমবর্ধমান। প্রতিদিন বৃষ্টিপাত বন্ধ না হওয়ায় এবং পানি আসতে থাকায় ত্রাণের চাহিদার পরিমাণ পরিবর্তিত হচ্ছে। গৃহহীনের সংখ্যাও বাড়ছে।
শেরি রেহমান জানান, সিন্ধু ১০ লাখ তাঁবু চেয়েছে এবং বেলুচিস্তান এক লাখ তাঁবু চেয়েছে।
তিনি বলেন, সব তাঁবু প্রস্তুতকারকদের একত্রিত করা হয়েছে এবং তাঁবুর জন্য বাইরের দাতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।
সূত্র : ডন