যে ‘হাওয়া’ দর্শকের হৃদয় জয় করে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে, সেটাকে রুখে দিতে চাইছে কিছু মানুষ। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত সিনেমাটির প্রদর্শনী বন্ধের জন্য লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন এক আইনজীবী। আবার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ভঙ্গের অভিযোগ এনে নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
এমন ঘটনায় স্তম্ভিত সিনেমা পাড়া। ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এবার এসেছেন প্রকাশ্যে, একতাবদ্ধ হয়ে। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন শিল্পী ও নির্মাতারা। সেখানে দেশের বরেণ্য নির্মাতা-অভিনেতা থেকে শুরু করে এ সময়ের গুণী শিল্পীরাও অংশ নিয়েছেন।
হাজির হয়েছেন দুই বাংলাজয়ী অভিনেত্রী জয়া আহসানও। মাইক্রোফোনের সামনে বসে তিনি ক্ষুব্ধ স্বরে অনেক কথা বলেছেন। জয়া বলেন, ‘কোনো শিল্পকলা আসলেই কি শর্ত মেনে চলতে পারে? কোনো চলচ্চিত্র কি শর্তসাপেক্ষে তৈরি হতে পারে? তাহলে চলচ্চিত্র কেন? শর্ত দিয়ে যদি বানাতে হয়, তাহলে চলচ্চিত্র নির্মাণের অর্থই হয় না।’
জয়া জানান, তিনি নিজেই প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। এসবের প্রতি তার বিশেষ আবেগ রয়েছে। এরপরও তিনি ‘হাওয়া’র বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন, কেননা এখানে বৃহৎ স্বার্থে পাখির দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এটাকে সরলীকরণ করা অনুচিত বলে মনে করছেন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে জয়া আহসান আরও বলেন, ‘বন উজাড় হচ্ছে, দিনের পর দিন পশুপাখির সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় বনবিভাগ বা প্রশাসন কোথায়? চলচ্চিত্রের বেলায় প্রশাসনের সবসময় যে চাপ, সেটা বন্ধ করতে হবে। সব চরিত্র যদি নিয়ম মেপে চলতে থাকে তাহলে তো কোনো ফিকশনই তৈরি হবে না। আমরা কী তাহলে চলচ্চিত্র নির্মাণ করব না? আমরা কী তাহলে গল্প বলব না?’
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’ গত সাড়ে তিন বছর ধরে সেন্সর বোর্ডে নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। এ বিষয়ে জয়ার ভাষ্য, “শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি নিয়ে এখন কথা হচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি। হলি আর্টিজেনের ঘটনা তো আসলে ঘটেছে। সেগুলো নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। কিছুদিন আগে শাহিন আক্তার একটি উপন্যাস রচনা করলেন। এগুলো তো আমরা আটকে রাখতে পারব না। চলচ্চিত্রের সময় কি অসুবিধা?’
হলি আর্টিজানের ঘটনায় অনেক বেশি মর্মাহত হয়েছেন জয়া। এ কারণে নিজের জন্মদিন পর্যন্ত পালন করেন না। কারণ তার জন্মদিনেই ঘটনাটি ঘটেছিল। জয়া বলেন, ‘আমার জন্মদিন ১ জুলাই। হলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে আমি এতটা ট্রমাটাইজ হয়ে আছি যে, আমার জন্মদিনটা পালন করতে পারি না। আমার মনে হয় সে দিনে একটা কালো দাগ লেগে গেছে।’
উল্লেখ্য, ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কন্টটেন্টে সেন্সরশিপের খড়গ গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মোরশেদুল ইসলাম, তারিক আনাম খান, গাউসুল আলম শাওন, শম্পা রেজা, আফসানা মিমি, নুরুল আলম আতিক, মাসুম রেজা, কামার আহমেদ সাইমন, অমিতাভ রেজা, পিপলু আর খান, মেজবাউর রহমান সুমন, চঞ্চল চৌধুরী, ইরেশ যাকের, আজমেরী হক বাঁধন, জাকিয়া বারি মমসহ শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে।