শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের পাহাড় জমেছে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ছাত্রী নির্যাতনের অডিও ভাইরাল হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের কাছের হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় কলেজের রাজিয়া বেগম হলের ২০২ নম্বর কক্ষে হলের চার ছাত্রীকে গালাগাল এবং নানা হুমকি দেন। পরে এই ঘটনার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চান। তবে কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হল ক্যান্টিন, ওয়াইফাই কোম্পানি ও কলেজের ফুটপাতের দোকানেও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, রিভার নেতৃত্বে শুধু আগস্ট মাসেই ওয়াইফাই প্রোভাইডার, কলেজ ও হল ক্যান্টিন এবং ফুটপাতের দোকান থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে তীব্র অন্তর্কোন্দল রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য তামান্না জেসমিন রিভাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
তবে এসব ঘটনার পরও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ হাত গুটিয়ে আছে। রিভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এত বড় ঘটনার পর তাকে ন্যূনতম কারণ দর্শানোর নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অতীতে অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিভা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অনেকেই মনে করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রী যুগান্তরকে বলেন, এই যে শিক্ষার্থী নির্যাতনের এত বড় ঘটনা ঘটেছে। এটার কোনো প্রভাব রিভার ওপর পড়েনি। সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর ব্যবস্থা কেনই বা নেবেন, রিভা জয়-লেখকের কাছের মানুষ বলেই তো তাকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বানানো হয়েছে। তারা আরও বলেন, এই ঘটনার যদি কোনো বিচার না হয় তাহলে রিভা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যা ছাত্রলীগেরই ক্ষতি করবে।
অভিযোগ ওঠার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহান খান যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অডিও ভাইরাল হয়েছে। সে বিষয়ে রিভা নিজে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষমা চেয়েছে। তার এই আচরণ ছাত্রলীগের আদর্শবিরোধী। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ইডেন কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের নেত্রীরা কেন এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের ছাত্র রাজনীতিবিমুখ করবে। তাই এই ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
রিভার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে তাদের মোবাইল ফোনে খুদেবার্ত পাঠানো হলেও তারা তার কোনো উত্তর দেননি।