বাজারে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর দাম বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েও বাজারে নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আমদানির জন্য ডলারের দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ডলারের দরও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এবার বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার কেনার দরও বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) কারিগরিক কমিটি ইতোমধ্যে একটি বৈঠক করেছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি বৈঠক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই বৈঠকের পরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এভাবে বিভিন্ন খাতে ডলারের দর বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে ব্যাংকগুলোর জন্য ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে বাফেদাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ওই বৈঠকের অংশ হিসাবে বাফেদা ইতোমধ্যে আন্তঃব্যাংক ও আমদানির জন্য ডলারের দর বেঁধে দিচ্ছে। ফলে তাদের বেঁধে দেওয়া দরেই সব ব্যাংক ডলার বেচাকেনা করছে।
কিন্তু এতেও সংকটের নিরসন হচ্ছে না। বাফেদার ওই সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে ব্যাংকগুলো এখন বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে চড়া দামে ডলার কিনছে। আন্তঃব্যাংকে এখন প্রতি ডলার ৯৫ টাকা।
আমদানির জন্য প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ৫ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য খাতে প্রতি ডলারে ব্যাংকগুলো ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সর্বোচ্চ এক টাকা মুনাফা করতে পারবে। অর্থাৎ যে দামে কিনবে তারচেয়ে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে।
এতে চাহিদা অনুযায়ী ডলার না পাওয়ায় ব্যাংকগুলো এখন বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে প্রতি ডলার কিনছে ১০৭ টাকা থেকে ১১১ টাকায়। সেগুলো বিক্রি করছে ১০৮ টাকা থেকে ১১২ টাকায়।
এতে বাজারে আরও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার কেনার দর বেঁধে দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বুধবার বাফেদার ১৪ সদস্যের কারিগরিক কমিটি রাজধানীর কাকরাইলের বাফেদার কার্যালয়ে একটি বৈঠক করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অসিম কুমার সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ১৩টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানরা এর সদস্য।
কমিটির সদস্য হিসাবে রয়েছেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান শামসুল ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম ও ট্রেজারি প্রধান মোহাম্মদ ফজলুল কবির, জনতা ব্যাংকের ইয়াকুব মিয়া, অগ্রণী ব্যাংকের মুখলেছুর রহমান, মেঘনা ব্যাংকের সিদ্দিবুর রহমান, ব্যাংক এশিয়ার তারেকুল আরেফিন, আইএফআইসি ব্যাংকের মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, যমুনা ব্যাংকের মেহেদী হাসান, ট্রাস্ট ব্যাংকের মোহাম্মদ মাসুদ শাহজাহান, ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদ ইয়াহা এবং বাফেদার উপনির্বাহী সচিব আবুল হাসেম।
কারিগরিক কমিটির সভায় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার কেনার একটি দর বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কেননা এখানে বর্তমানে বেশ অস্থিরতা চলছে। যে ব্যাংক যেমন খুশি তেমন দরে ডলার কিনছে।
কিন্তু অফিসিয়ালি বাফেদা কোনো দর বেঁধে দিতে পারে না। কেননা বাফেদা কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়। এদিকে কারিগরিক কমিটি কোনো চিঠিও দিতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
যে কারণে কারিগরিক কমিটি বাফেদার নির্বাহী কমিটির কাছে একটি প্রস্তাব পাঠাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করার জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মত হলে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হচ্ছে কিছু ডলার ওই দরে বিক্রি করতে। এ খাতে আর দর বাড়ানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের সদস্যদের ক্ষেত্রে ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার জন্য।
ফলে তারাও এখন দর বেঁধে দিয়ে সবাইকে তা জানিয়ে দিচ্ছে। তারা প্রতি ডলারে দেড় টাকা মুনাফা করতে পারবে। অর্থাৎ যে দরে তারা ডলার কিনবে তারচেয়ে দেড় টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে পারবে। ফলে ওই দরেই এখন মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে।
এদিকে আইএমএফ ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার বিপক্ষে। তারা বলেছে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে। এতে বাজারের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে। এর ভিত্তিতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে।