রাজধানীর উত্তরায় লরি চাপায় (লং ভেহিক্যাল) ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল কাজী মাসুদ (৩৮) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় লরিটিকে পুলিশ জব্দ করলেও চালক পালিয়েছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আবদুল্লাহপুরের টঙ্গী ব্রিজের ১০০ গজ দক্ষিণে শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ কনস্টেবল মাসুদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উত্তরা পূর্ব জোনে কর্তব্যরত ছিলেন। তিনি ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন। মাসুদ বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার দোপাখালী গ্রামের কাজী হেমায়েত উদ্দিনের ছেলে। তিনি রাজধানীর দক্ষিণখানের জয়নাল মার্কেটের নাভিল ভিলাতে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকতেন।
ময়মনসিংহ থেকে কারওয়ান বাজারে মাছ নিয়ে এসেছিলেন সাকিব ও সুজন। ট্রাফিক পুলিশের সড়ক দুর্ঘটনার সময় তারা আবদুল্লাহপুর হয়ে ফের ময়মনসিংহে ফিরছিলেন। সাকিব ও সুজন আজকের পত্রিকাকে জানান, টঙ্গী ব্রিজের পাশে আসা মাত্রই ওই পুলিশ কনস্টেবল রাস্তা পারাপারের জন্য আমাদের গাড়িটিকে সিগন্যাল দেয়। আমরা গাড়ি স্লো করলে তিনি আমাদের গাড়ির সামনে দিয়ে না গিয়ে পেছন দিক থেকে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ একটি গাড়ি আমাদের গাড়িকে পেছন থেকে ব্যাপক জোড়ে ধাক্কা দিলে আমাদের গাড়িটি সামনে থাকা উড়াল সেতুর ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে এসে দেখি পেছনের লরির নিচে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই পুলিশ কনস্টেবল পড়ে আছেন।
ঘটনার রাতে আবদুল্লাহপুরে এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট এসএম নকীব হোসেন, কনস্টেবল সাইদুল ও মাসুদ কর্তব্যরত ছিলেন। কর্তব্যরত সার্জেন্ট এসএম নকীব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি পুলিশ বক্সের ভেতরে ছিলাম। রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে আশপাশের লোকজন আমাকে জানায় একজন পুলিশ সদস্য গাড়ি চাপা পড়েছেন। পরে দৌড়ে গিয়ে মাসুদকে আহত অবস্থায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল সাইদুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় বক্সে ছিলাম। পুলিশ কনস্টেবল মাসুদ গাড়ি চাপায় আহতের খবর পাওয়ার পর সেখানে গিয়ে তাঁকে দেখে সইতে পারিনি। পরে অসুস্থ হয়ে পড়ি।’
এদিকে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দুই সন্তানকে বাসায় ঘুমের মধ্যে রেখে রুমে তালা মেরে হাসপাতালে ছুটে আসেন রিনি। হাসপাতালে এসে স্বামীর মরদেহ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে তাঁর চিকিৎসা করাচ্ছেন স্বজনেরা।
উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লড়ি চাপায় ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল নিহতের ঘটনায় লরিটি জব্দ করা হয়েছে। যদিও চালক পালিয়েছে। লড়ি চাপায় ওই পুলিশ কনস্টেবলের কপালে আঘাত ও বুকের পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে। তার মরদেহ সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. বদরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবদুল্লাহপুরে রাতে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় রাস্তা পারাপারের সময় একটি লং ভেহিক্যাল পুলিশ কনস্টেবল মাসুদকে ধাক্কা দেয়। ওই সময় ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত সার্জেন্ট তাঁকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্য চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই ঘাতক লরিটি জব্দ করা হয়েছে। চালক পালিয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’