মাত্র ৯ সেকেন্ডেই ভেঙে পড়লো বহুতল ভবন। ভারতের উত্তরপ্রদেশের নয়ডার ‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’ এখন অতীত। স্থানীয় সময় রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে বিস্ফোরক দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় এই যমজ অট্টালিকা।
এ যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়েছে বেআইনিভাবে তৈরি ভারতের এই টুইন টাওয়ার। মাত্র ৯ সেকেন্ডেই ধুলোয় মিশে গেছে কুতুব মিনারের চেয়েও উঁচু এই বহুতল ভবন।
রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভেঙে ফেলা হয় এই গগনচুম্বী জোড়া অট্টালিকা। এই কাজের জন্য ৩ হাজার ৭০০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে। চোখের পলকেই যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো বহুতল ভবনটি। গত বছর এই ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’টি ভেঙে ফেলতে প্রায় ২০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে। ওই ভবনের আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপত্তায় আগেই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নয়ডার কর্মকর্তারা ভবনটি ধ্বংসের সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল এবং হাসপাতালকে সহায়তা করার জন্য একটি কন্ট্রোল রুম চালু করে।
নির্মাণের শুরু থেকেই বিতর্ক সঙ্গী ছিল নয়ডার এই যমজ অট্টালিকার। মাটিতে মিশে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বিতর্কেরও অবসান হলো। ২০০৫-এ সেক্টর ৯৩এ-তে ১৪টি অট্টালিকা বানানোর অনুমতি পেয়েছিল সুপারটেক নির্মাণ সংস্থা। অট্টালিকাগুলোর উচ্চতা ৩৭ মিটারের মধ্যে হতে হবে এমন নির্দেশ দিয়েছিল নয়ডা প্রশাসন।
২০০৬-এ আরও জমি দেওয়া হয় নির্মাণ সংস্থাকে। ২০০৯ সালে স্থির করা হয়, আরও দুটি অট্টালিকা বানাবে সুপারটেক। তার মধ্যে একটি হলো অ্যাপেক্স, অন্যটি সিয়েন। ২৪ তলা পর্যন্ত এই যমজ অট্টালিকা বানানো হবে বলে স্থির করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, নিয়ম ভেঙে সেই অট্টালিকা ৪০ তলা করা হয়। আর এখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।
এমারল্ড কোর্ট ওনার্স রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এই অনিয়মের বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করে। অভিযোগ তোলা হয়, নির্মাণকারী সংস্থা উত্তরপ্রদেশ অ্যাপার্ট ওনার্স অ্যাক্ট, ২০১০-এর লঙ্ঘন করেছে। শুধু তাই-ই নয়, যেখানে বাগান করা হবে বলে দলিলে দেখানো হয়েছিল, সেই জায়গায়ই অট্টালিকা গড়ে তোলা হয়। নির্মাণ আইন অনুযায়ী, যেখানে দুটি অট্টালিকার দূরত্ব ৩৭ মিটার হওয়া উচিত, সেখানে ১৬ মিটার দূরত্বে অ্যাপেক্স এবং সিয়েনকে নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে এই যমজ অট্টালিকা নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ঘুরে সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা পৌঁছায়। অবশেষে যমজ অট্টালিকা ভাঙার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।