ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া মুসলিম নেতা মুক্তাদা আল-সদর গতকাল সোমবার (২৯ আগস্ট) রাজনীতি ছেড়ে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপরেই বাগদাদে ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী ও মুক্তাদার সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৭০০ জন। এরমধ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০ জন সদস্য আছেন। দেশটির মেডিক্যাল সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
বাগদাদ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মাহমৌদ আবদেলওয়াহেদ জানান, রাতজুড়ে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি এখন চরম উত্তেজনাকর। আমরা গ্রিনজোনের ভেতরে গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। সেখানে মাঝারি ও হালকা অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার মুক্তাদা আল-সদর রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর মুক্তাদা আল-সদরের অনুগত বিক্ষোভকারীরা দেশটির প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে হামলা চালায়। এরপরেই সংঘর্ষ দেখা দেয়।
ইরাকের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আরও কয়েকটি শহরে সহিংসতার পর সেনাবাহিনী দেশব্যাপী কারফিউ ঘোষণা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রাত নামার পর মেশিনগানের গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ট্রেসারের আলোয় বাগদাদের গ্রিন জোনের আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। এই গ্রিন জোনেই ইরাকের মন্ত্রণালয়গুলোর সদরদপ্তর ও বিদেশি দূতাবাসগুলোর অবস্থান। এ রাতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক লড়াই প্রত্যক্ষ করে ইরাকের রাজধানী।
আল জাজিরা বলছে, রাতজুড়ে সংঘর্ষের পর বাগদাদের বাসিন্দাদের বিরতিহীন গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আশেপাশের এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের হটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
এক সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা ও মুক্তাদা আল-সদরের নেতা এবং তাদের বিরোধীদের সঙ্গে আপোসের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে সিনএনএন ও হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বাগদাদেও শ্রীলঙ্কার মতো দৃশ্য দেখা গেছে। বাগাদাদে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়েন। এরপর তারা সেখানে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটেন ও সেলফি তুলেন।
খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ভবনের সুইমিং পুলে সাঁতার কাঁটার পাশাপাশি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ভবনজুড়ে। মাস দুয়েক আগে শ্রীলঙ্কার এই দৃশ্য দেখা গেছে।
দেশটির এই অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থাটি উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহব্বান জানিয়েছে।
এছাড়া দেশটিতে সংঘর্ষের কারণের যে কারফিউ জারি করা হয়েছে তা নিয়ে দেশজুড়ে সরকারি কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের ইরাক ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে।