মন্থর উইকেট, ব্যাটে ঠিকমতো আসছিল না বল। আগ্রাসী আফগান ব্যাটসম্যানরা ধুঁকছিলেন টাইমিং করতে। বাংলাদেশ দল তখন দারুণ উজ্জীবিত। শেষ ৬ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৬৩ রান। সাকিব আল হাসানের মনে হয়েছিল, ম্যাচ তাদের পকেটে। কিন্তু নাজিবউল্লাহ জাদরানের ব্যাটিং তাণ্ডবে শেষ পর্যন্ত আশাভঙ্গ সাকিব ও বাংলাদেশের।
আফগানদের ব্যাটিংয়ের সুর বদলের শুরু ওই ওভারের পর থেকেই। পঞ্চদশ ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে দুটি বাউন্ডারি মারেন ইব্রাহিম জাদরান। শেষ ৫ ওভারে তাদের সমীকরণ দাঁড়ায় ৫২ রানের। নাজিবউল্লাহ তখন খেললেন ৪ বলে ১ রান নিয়ে।
বাকিটা পুরোই নাজিবউল্লাহ-শো।
শেখ মেহেদি হাসানের ডেলিভারি গ্যালারিতে আছড়ে ফেলা, মুস্তাফিজুর রহমানের এক ওভারে পেশির জোরে দুটি ছক্কা, সাইফ উদ্দিনে ওভারেও জোড়া ছক্কা। ব্যস, বাংলাদেশের মুঠো থেকে ম্যাচ আফগানিস্তানের নাগালে। এরপর মোসাদ্দেক হোসেনের বলে ছক্কায় খেলার সমাপ্তি। মাঠ ছাড়ার সময় নাজিবউল্লাহর নামের পাশে ৬ ছক্কায় ১৭ বলে অপরাজিত ৪৩!
ম্যাচের পর নিজেদের আশা-হতাশার কথা জানিয়ে সাকিব কৃতিত্ব দিলেন আফগানিস্তানের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে।
“আমরা জানতাম নাজিবউল্লাহ বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান। সে যেভাবে খেলেছে, ম্যাচটা আমাদের কাছ থেকে বের করে নিয়ে গেছে। শেষ ৬ ওভারে ওদের ৬০ রানের মতো (৬৩) দরকার ছিল। আমাদের মনে হয়েছিল, এরকম উইকেটে ম্যাচ আমাদেরই হাতে। হবে নাজিবউল্লাহকে কৃতিত্ব দিতে হবে, যেভাবে সে খেলেছে।”
বাংলাদেশের ভোগান্তির শুরু অবশ্য ম্যাচের শুরু থেকেই। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দল ২৮ রানের মধ্যে হারায় ৪ উইকেট! ভালো স্কোরের আশাও অনেকটা শেষ হয়ে যায় ওখানেই।
মোসাদ্দেক হোসেনের সৌজন্যে তবু ১২৭ পর্যন্ত যেতে পারে দল। এরপর সাকিব, মেহেদির দারুণ বোলিংয়ে ওই পুঁজি নিয়েও জয়ের আশা জাগে ভালোমতোই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না।
পেছন ফিরে তাকিয়ে রানের খানিকটা কমতির কথাই বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“প্রথম ৭-৮ ওভারে ৪ উইকেট হারালে কাজটা সবসময়ই কঠিন হয়ে ওঠে। তার পরও উইকেট যেরকম ছিল, আমাদের ১০-১৫ রানের ঘাটতি ছিল। বোলাররা অসাধারণরকম ভালো বোলিং করেছে, প্রথম ১৫ ওভারে ম্যাচ আমাদেরই ছিল। শেষ ৫-৬ ওভারেই ওরা আমাদের কাছ থেকে ম্যাচ বের করে নিয়ে গেছে। আফগানিস্তানকে কৃতিত্ব দিতে হবে, তারা যেভাবে খেলেছে।”
ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটিং। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার আগে দেশে নিজেদের মধ্যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। এরপর এই ম্যাচে দলের চরম বিপর্যয়ের মধ্যে সাতে নেমে খেলেন ৩১ বলে ৪৮ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
তবে দলের আর কেউ ২৫ ছাড়াত পারেননি। প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানের একজনও ছুঁত পারেননি ১৫।
মোসাদ্দেককে কৃতিত্ব দিয়ে সাকিব আক্ষেপ করলেন অন্যদের ব্যর্থতায়।
“আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাছে এটাই চাই আমরা। টি-টোয়েন্টিতে যে দাঁড়িয়ে যায়, তাকে নিশ্চিত করতে হবে যেন দলকে এগিয়ে নেয়। মোসাদ্দেক আমাদের জন্য সেই কাজটি করেছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা যথেষ্ট হয়নি। আরও অন্যদের অবদান প্রয়োজন ছিল আমাদের, তা হয়নি।”
এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে খেলার লড়াইয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।