আইনে না থাকায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নিবন্ধন পায় না। সরকার এখন নতুন আমদানি করা ইলেকট্রিক কার নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) দেবে। এজন্য সড়কের ধারে থাকবে চার্জিং স্টেশন। মূলত কার্বন ও শব্দদূষণ কমাতে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার উৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
পরিবেশ দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ রোধে ইলেকট্রিক কারকে ভবিষ্যতের বাহন বলা হচ্ছে। প্রতিবেশী ভারতেও চলছে বিদ্যুৎচালিত প্রাইভেটকার কিংবা বাস। চীন পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসচালিত গাড়ির বদলে ইলেকট্রিক কারকে উৎসাহিত করছে। দেশটিতে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট গাড়ির অর্ধেক হবে বিদ্যুৎচালিত।
গত রবিবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আসা মতামত যোগ করে ভেটিং শেষে এ সংক্রান্ত নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়। এর নাম ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা’।
যুক্তরাজ্যের সড়কে তেলের পাম্পের মতো গাড়ি চার্জ করার স্টেশন গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও চার্জিং স্টেশন থাকবে। এজন্য এর আগে ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য চার্জিং নীতিমালা করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
ইলেকট্রিক কারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ব্যাটারিচালিত গাড়ি, যা সাইকেল বা রিকশা নয়। তবে পুরনো গাড়ি আমদানি করা যাবে না। লিথিয়াম আয়ন বা তার চেয়ে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করতে হবে। তবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রচলিত এসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে।
নীতিমালায় অনুযায়ী, তিন চাকার ইলেকট্রিক গাড়ির আয়ুষ্কাল হবে ১০ বছর। মোটর সাইকেলের ১২ বছর এবং হালকা, মধ্যম ও ভারী যানবাহনের আয়ুষ্কাল হবে ২০ বছর। তিন চাকার ডিজেল ও গ্যাসচালিত অটোরিকশার আয়ুষ্কাল ১৫ বছর। বাসের ২০ এবং ট্রাকের আয়ুষ্কাল ২৫ বছর ধরা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মতামত এসেছে, ইলেকট্রিক এবং ইঞ্জিনচালিত সমজাতীয় গাড়ির আয়ুষ্কাল যেন একই হয়।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইউসুব আলী মোল্লা বলেন, বিদ্যমান গাড়ির মতো ইলেকট্রিক কার শনাক্তে চেসিস নম্বর থাকতে হবে। ইঞ্জিন নম্বরের পরিবর্তনে মোটর নম্বর থাকবে। মোটর নষ্ট হলে তা বদল করা যাবে। ব্রেকিং, স্টিয়ারিং, লাইটিং, সাসপেনশন বিদ্যমান ইঞ্জিনচালিত গাড়ির সমতুল্য হতে হবে।
ইলেকট্রিক কার আমদানির অনুমতি থাকলেও নিবন্ধন না দেওয়ায় বিক্রি নেই। চীন থেকে আনা ২০২০ মডেলের এমজি জেডএস গাড়ি দুটির প্রতিটি ৩৯ লাখ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গাড়িগুলোর মোটর ৪৪ দশমিক ৫ কিলোওয়াটের।
বিআরটিএর মিরপুর সার্কেলের উপপরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নিবন্ধন দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ইলেকট্রিক কারকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের নভেম্বরে ইলেকট্রিক কার নীতিমালার প্রাথমিক খসড়া সড়ক পরিবহন বিভাগে পাঠায় বিআরটিএ। পরের বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যালোচনা সভা হয়। তা থেকে মতামত আসে, নতুন নীতিমালার প্রয়োজন নেই। মোটরযান অধ্যাদেশের মাধ্যমেই নিবন্ধন দেওয়া সম্ভব। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর মোটরযান অধ্যাদেশ রহিত করে কার্যকর হয়েছে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’।
চলতি বছরের জুনে প্রণীত বিদ্যুৎ বিভাগের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বাড়িতে ব্যক্তিগত চার্জিং স্টেশন করা যাবে। তবে তিনটির বেশি ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ করলে বাড়তি কর দিতে হবে।
চার্জিং নির্দেশিকায় বলা হয়েছে- ১১ কিলোভোল্টের বিদ্যুৎ সংযোগ থাকতে হবে চার্জিং স্টেশনে। দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য টাইপ-১ এসি চার্জার সুবিধা থাকতে হবে। আবাসিক সমিতি, শপিংমল, অফিস, পেট্রোলপাম্পে স্থাপিত চার্জিং স্টেশন পাবলিক স্টেশন বলে গণ্য হবে। চার চাকার গাড়ির জন্য এসি ও ডিসি কারেন্টের জন্য ১১ থেকে ৫০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সংযোগ থাকতে হবে। গ্রাহককে তেল, গ্যাস কেনার মতোই চার্জের জন্য দাম দিতে হবে।