২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে প্রায় ২০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) একই মাসের চেয়ে প্রায় ১২.৬ শতাংশ বেশি। তবে এটি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চেয়ে ৭ কোটি ডলার কম। গত বছরের আগস্টে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৮১ কোটি ডলার। এই হিসাবে গত বছরের আগস্টের তুলনায় এ বছরের আগস্টে প্রবাসীরা ২৩ কোটি ডলার বেশি পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাস শেষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের একই মাসে এসেছিল ১৮১ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্ন নীতিসহায়তা দিয়ে আসছে। এতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ কারণে অর্থবছরের প্রথম মাসের পর দ্বিতীয় মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) রেমিট্যান্স এসেছে ৪১৩ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের চেয়ে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের জুলাই ও আগস্টে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ৩৬৮ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত জুলাই মাসে ২০৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আগের মাস জুনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে নেতিবাচক অবস্থায় চলে আসে রেমিট্যান্স, যা চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় মাসে আশার সঞ্চালন করে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডলার সংকট চলছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন হয়, এমন সব প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম যাচ্ছে। হুন্ডি বা অন্য কোনও ব্যবস্থায় ডলার কেনা-বেচা করছে কিনা দেখবে পরিদর্শন টিম।
এদিকে কেউ যাতে ১০ হাজার মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার নোট এক মাসের বেশি সময় নিজের কাছে রাখতে না পারে, সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (৩১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে। এতে বলা হয়, নিবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তি বিদেশ থেকে সঙ্গে আনা অনধিক ১০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমমূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা নিজের কাছে বা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাবে জমা রাখতে পারেন, পরবর্তী বিদেশ যাত্রায় ওই বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিয়েও যেতে পারেন। ১০ হাজার মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত পরিমাণ আনা বিদেশি মুদ্রা দেশে আসার এক মাসের মধ্যে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে/লাইসেন্সধারী মানিচেঞ্জারের কাছে বিক্রি বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাবে জমা রাখা নিবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক। উপরিউক্ত প্রাধিকার বহির্ভূত বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করা ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ এর আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রাধিকারভুক্ত নয় এমন বৈদেশিক মুদ্রা নিবাসী বাংলাদেশির কাছে থাকলে, তা আগামী সেপ্টেম্বর ৩০ এর মধ্যে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে/লাইসেন্সধারী মানিচেঞ্জারের কাছে বিক্রি করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের পর অননুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রা নিবাসী ব্যক্তির কাছে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা জমা আকৃষ্ট করার জন্য ইউরো কারেন্সি রেট প্রত্যাহার করে সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে বাড়ছে ডলারের দাম। ব্যাংকগুলোতে এখন আমদানির জন্য ১০০ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। রেমিট্যান্সের জন্যও সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। আর খোলাবাজারে দর বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।