সিলেটের মানুষের আয় বেশি হলেও শিক্ষায় পিছিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আজশুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য নির্মিত সৈয়দ মুজতবা আলী হলের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট একটি ঐতিহ্যময় স্থান। জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সমৃদ্ধ জায়গা এ সিলেট। এক সময় বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মানুষ ছিল সিলেটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সাম্প্রতিককালে আমরা শিক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে গেছি। বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেটের অবস্থান অনেক পিছিয়ে। ফলে আমাদের মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার বেশি। যদিও সিলেটের মানুষের আয় ভালো, তবুও আমরা এসব ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি।’
শিক্ষায় পিছিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ড. মোমেন বলেন, ‘এর অন্যতম কারণ-আমাদের অবকাঠামো, স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অভাব। এটি নিয়ে ২০০৩ সালে আমি একটা জরিপ করি। সে জরিপ অনুযায়ী বৃহত্তর সিলেট এবং বরিশালের মানুষ ছিল সমান। কিন্তু বর্তমানে বরিশালে তুলনায় সিলেটে মানুষ বেশি। তবুও শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেট থেকেও সাড়ে তিন গুণ বেশি স্কুল-কলেজ রয়েছে বরিশালে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি একটি চাকরির জন্য বরিশালের ছয়জন গ্রাজুয়েট আবেদন করলে, সেখানে সিলেটের মানুষ থাকে মাত্র ১ জন। তাই আমাদেরকে শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও জোর দিতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার ছাত্র ভাই-বোনদের প্রতি আহ্বান করব তোমরা আন্দোলন কর, কিন্তু শিক্ষা ছেড়ো না। আমার খুব দুঃখ লাগে আমার দলের ছেলে-মেয়েগুলো, ছাত্রলীগ-যুবলীগ এরা চাকরি করতে পারে না, ব্যবসাটাও করতে পারে না।’
শাবিপ্রবির উপাচার্য ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনেক আন্তরিকতা আছে, ইচ্ছা আছে। যার ফলে এত সুন্দরভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে অবকাঠামোর আর অভাব থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলিষ্ট নেতৃত্ব ও প্রশাসনের কাজ ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সৈয়দ মুজতবা আলীর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি একজন দূরদর্শী সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা ও সংগ্রাম করেছেন তিনি। রাষ্ট্রভাষার এক অগ্রদূত ছিলেন তিনি। আমি জেনে আনন্দিত যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর নামে একটা হল হয়েছে, সেটির প্রথম উদ্বোধন করেন আমার বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত।’
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রাতুষ্পুত্র সৈয়দ রুহুল আমীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন প্রমুখ।