বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা“সমকাল”র সাথে একান্ত সাক্ষৎকারে বর্তমান বাংলাদেশের সেরা ওপেনার লিটন কুমার দাশ,বাংলাদেশের সমস্যার মূল আদ্যেপান্ত তুলে ধরলেন কুমার দাশ।
আলাপকালে তিনি বলেন,মিরপুরে ব্যাটিং করে আজ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি।দেশি-বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে পারলে ক্রিকেটারদের উন্নতিটা দ্রুত হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নানা কারণেই বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ পান না। সুযোগ পেলেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা উচিত বলে মনে করেন লিটন কুমার দাস। জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটারদের কাউন্টি ক্রিকেটে যাওয়ার পরামর্শ তাঁর।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা সময়ে এসে সবাই খেলতে চান। প্রতিটি খেলোয়াড়ের প্রথম স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একজন ক্রিকেটারের কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় ভবিষ্যতে সে কী করতে চায়? উত্তর দেবে, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চাই। জাতীয় দলে খেলার পর চিন্তা হবে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে চাই। এজন্য বাংলাদেশ দলের প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় হতে হবে। তবেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ডাক পড়বে। বাইরে অনেক ক্রিকেটার পাবেন, যাঁরা জাতীয় দলে খেলেননি কিন্তু বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে বেড়ান। কারণ তাঁদের ওখানে অনেক ক্রিকেটার আছেন। ঘরোয়া ক্রিকেট অনেক উন্নত। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, জাতীয় দলের খেলার কারণে বিদেশি লিগে খেলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জাতীয় দলের ফাঁকে ফাঁকে ফ্র্যাঞ্চাজি লিগে খেলতে পারলে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে। কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ভিন্ন ভিন্ন দেশের নানা মানসিকতার মানুষ পাবেন। যেখান থেকে অনেক কিছু শেখার থাকে। যেটা আমাদের ড্রেসিংরুম থেকে সম্ভব না। কারণ এখানে আমরা নিজেরাই থাকি। আবার নতুন জায়গায় গেলে একা চলতে হয়। সবার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে হয়। নতুন জায়গায় চলা শুরু করলে দেখবেন হাঁটাচলা, চিন্তাভাবনা অন্যরকম হয়ে যায়। সুযোগ থাকলে আমিও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে চাইব।
তিনি আরো বলেন,ভালো মানের বিদেশি না থাকলে ঘুরেফিরে ডিপিএলের মতো হয়ে যাবে। সাদামাটা ক্রিকেটার বেরোবে। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে বিপিএল খেলেছি এর কারণেই বাংলাদেশ দল খুব ভালো রেজাল্ট করেছে দেশে-বিদেশে। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে সিরিজ জিতেছি। এগুলোর কিন্তু প্রভাব পড়ে। বিপিএল সাদামাটা হয়ে গেলে তেমন একটা লাভ হবে না। হয়তোবা টুর্নামেন্ট নিয়মিত হবে, কিন্তু ক্রিকেটারদের উন্নতি কম হবে। আন্তর্জাতিক মানে থাকতে হলে বিপিএলে বড় ক্রিকেটার আনতে হবে। চারজন বিদেশি দলে থাকা আর না থাকা বিশাল একটা ব্যবধান তৈরি করে। বিপিএলে ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটার আনতে না পারলে আমাদের উন্নতি হবে না।
কি টি২০ দলের ডিমান্ড ফিল করতে পারছে কিনা এ প্রশ্নে লিটন বলেন, আমার টি২০ ক্যারিয়ারটা উত্থান-পতনের মধ্যে ছিল। আমি সবসময় চেষ্টা করি স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে। দুই বছর আগে আমার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩০-১৩৫। তার মানে আমি মেরে খেলতে পছন্দ করি। টি২০ এমন একটি জায়গা, বিশেষ করে ওপেনারদের সুযোগ কম থাকে। পাওয়ার প্লেতে ৯ জন ফিল্ডার বৃত্তের ভেতরে থাকে। এর যেমন ইতিবাচক দিক আছে, তেমনি আছে নেতিবাচক দিকও। ফিল্ডার বিট করতে পারলেই রান। সিঙ্গেল বের করা আবার কঠিন। আসলে ফ্লোটা ধরতে পারলে কম বলে বেশি রান করে। ফ্লো ধরতে না পারলে বেশি বল খেলে কম রান করে। এই জায়গায় ওপেনিং ব্যাটসম্যান ইতিবাচক মাইন্ড নিয়ে না খেললে কখনোই সেখান থেকে বেরোতে পারবে না। আমরা টি২০ খেলি মিরপুরে। যেখানে বল স্লো আসে। বাউন্ডারিতে বল বের করা খুবই কঠিন। বিশ্বের সবাই জানে মিরপুরের উইকেট ব্যাটসম্যানের জন্য খুবই কঠিন। বড় শট খেলা যায় না। দেশি-বিদেশি যারাই মিরপুরে খেলে স্ট্রাইক রেট নিচে নেমে যায়। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া দলও সংগ্রাম করেছে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ যে সিরিজ খেলেছি, সেগুলো খেয়াল করে দেখেন, ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট ১৫০ নেই। সবাই চিন্তা করেছে ২০ বল খেলে ২৫ রান করবে। ২০ বলে ২০ রান করলেও ভালো। মিরপুরে পরপর তিন-চারটা সিরিজ খেললে স্কোর ১২০ বা ১৩০ হলে স্ট্রাইক রেট যাচ্ছে তাই হবে। এই উইকেটে খেলে জিতে বাইরে স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে গেলেই খারাপ হবে। কারণ আপনি স্বাভাবিক ছন্দে মারতে পারবেন না। মারতে গেলেই আউট হয়ে যাবেন। ১০, ১৫ বা ২০ রানে আমরা বাইরে আউট হয়ে যাচ্ছি। মানুষ কিন্তু বোঝার চেষ্টা করে না আমরা কোন উইকেটে খেলে বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলতে গেছি। আমরা ধারাবাহিক ভালো করতে চাইলে নিয়মিত ভালো উইকেটে খেলতে হবে। জিম্বাবুয়েতে দেখেন আমরা খুব ভালো উইকেটে খেলেছি। দুটি ম্যাচে ৩০০ প্লাস রান করেছি। আমরা যদি দেশে এ ধরনের ভালো উইকেটে প্র্যাকটিস না করি, তাহলে বাইরে ম্যাচে গিয়ে সমস্যা হয়ে যায়।
জাতীয় দল থেকে কি বোর্ডের কাছে দেশের সর্বত্র স্পোর্টিং উইকেট চাওয়া হবে? তাকে এ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়। এটা যেমন চিরন্তন সত্য, আমি একটা জিনিস আবিস্কার করেছি, মিরপুরের উইকেট পরিবর্তন হবে না। আমি যেটা ফিল করি, যারা ব্যাটসম্যান আছে, তারা মিরপুরের উইকেটে যত কম প্র্যাকটিস করবে, ততই ভালো। এখন মিরপুরে প্র্যাকটিস না করে কোথায় করব? সে ক্ষেত্রে মিরপুরে ক্যাম্প হলে ইনডোরে ব্যাটিং করলে ভালো। সেন্টারে স্ল্যাবের ওপর করতে পারে। বল অন্তত সোজা আসবে। বিদেশে খেলতে গেলে এভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। আরেকটি বিকল্প হতে পারে চট্টগ্রামে ক্যাম্প করতে পারে। মিরপুরের চেয়ে চট্টগ্রামের উইকেটে ভালো- বলটা সোজা আসে। আমি আজ একাডেমি মাঠে অনুশীলন করালাম, এটা করার জন্য করা। অনেক দিন বসা তাই একটু দেখে নেওয়া। এখানে ব্যাটিং করে আজ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। মিরপুরের ক্রিকেট আর বাইরের ক্রিকেট সম্পূূর্ণ আলাদা। আমি বিশ্বাস করি, লম্বা ক্যাম্প হলে উইকেট খারাপ হতেই থাকেব। এই মাঠে যত কম প্র্যাকটিস করা যাবে, ততই মঙ্গল। মিরপুরে বেশি ব্যাটিং করলে বডি স্লো হয়ে যাবে। পরবর্তীতে ফাস্ট উইকেট বা স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে গেলে পারবে না। রিফ্লেকশন কমে যাবে।