বাঙালি সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এক আবেগের নাম সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এই নায়ক খুব কম সময় পর্দায় থাকলেও কাজ দিয়ে এখনো চির অম্লান। ঢাকাই সিনেমায় সালমান শাহ এসেছিলেন ধূমকেতুর মতো। ক্ষণজন্মা এই মহানায়কের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তার পুরো নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান এই অভিনেতা।
রহস্যময় মৃত্যুতে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান সালমান শাহ। চলে যাওয়ার ২৬ বছর পর আজও বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে এই নক্ষত্রকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন তার ভক্ত ও সহকর্মীরা। কারণ আজও ভক্তদের ‘অন্তরে অন্তরে’ সালমান শাহ।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ায় নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড়। ছোট ভাই শাহরান চৌধুরী ইভান। বৃশ্চিক রাশির জাতক সালমানের বিনোদনজগতে যাত্রা শুরু হয় বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে। তিনি ইস্পাহানি গোল্ডস্টার টি, জাগুয়ার কেডস, মিল্ক ভিটা, কোকাকোলা, ফানটা এবং জাগুয়ার কেডসের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন। ১৯৮৫ সালের দিকে হানিফ সংকেতের ‘কথার কথা’ নামের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সালমান। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন।
গায়ক হিসেবেও সালমানের পরিচিতি ছিল। ছোটবেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল তার। বন্ধুমহলে সবাই তাকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চিনতেন। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে উত্তীর্ণও হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসার আগেই মায়ের বান্ধবীর মেয়ে সামিরার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সালমান।
নব্বইয়ের দশকে বাংলা চলচ্চিত্র এক চরম দুঃসময় পার করছিল। ঠিক তখনই এ দেশের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে সালমান শাহর। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাস। জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির কপিরাইট কিনে নেয় আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড। বলিউডের জনপ্রিয় ছবিটির আদলে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি নির্মাণের প্রস্তুতি নেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। তখনকার জনপ্রিয় মডেল ও আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন সালমান। প্রথম ছবি দিয়ে তিনি জয় করে নেন অগণিত ভক্ত-দর্শকের হৃদয়। রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেন ঢাকাই ছবির নির্ভরযোগ্য তারকা। সালমানের জনপ্রিয়তার পারদ এতটাই আকাশচুম্বী ছিল যে পরবর্তী সময়ে আর কোনো নায়কই সেই উচ্চতা অতিক্রম করতে পারেননি।
ক্যারিয়ারে মোট ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সালমান শাহ। শাবনূরের সঙ্গে জুটি হয়ে ১৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সালমান। এ জুটির সব কটি সিনেমাই ছিল ব্যবসাসফল। শাবনূর ছাড়াও মৌসুমী, শাহনাজ, অন্তরা, শিল্পীসহ অনেকের সঙ্গে অভিনয় করেছেন সালমান শাহ।
মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার সালমানের। সময়টা অল্প হলেও একাই রাজত্ব করে গেছেন তিনি। এই চার বছরে উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল ২৭টি ছবি। সালমান শাহ অভিনীত ছবিগুলো হচ্ছে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্নেহ’, ‘প্রেম যুদ্ধ’ (১৯৯৪), ‘কন্যাদান’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’ (১৯৯৫), ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (১৯৯৬), ‘প্রেমপিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ (১৯৯৭)।
অভিনয়ের মাধ্যমে সালমান শাহ যেমন সবাইকে মোহাবিষ্ট করে রাখতেন, ঠিক তেমনি অমায়িক ব্যবহারের জন্য পেয়েছিলেন অনেকেরই প্রশংসা। চলচ্চিত্রে সালমানের জনপ্রিয়তা যখন আকাশচুম্বী, ঠিক তখনই মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয় তাকে। ১৯৯৬ সালের আজকের দিনে হঠাৎ তার মৃত্যুর সংবাদে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল সবাই। সালমানের মৃত্যুর পরও এ দেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের কাছেও প্রিয় একটি নাম সালমান শাহ। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ক্ষণজন্মা এ মানুষ ২৬ বছর আগে চলে গেলেও চলচ্চিত্রানুরাগীদের কাছে আজও সালমান শাহ সবচেয়ে বেশি আলোচিত একটি নাম।