নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ ২২ কিলোমিটার বেহাল সড়কটি দীর্ঘ চার বছরেও সংস্কার হয়নি। ফলে ২২ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ চরমে পরিণত হয়েছে। গত প্রায় চার বছর ধরে কার্পেটিং তুলে ফেলে রাখা হয়েছে সড়কটির। দিন দিন ছোট-বড় গর্ত আর ধুলাবালিতে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে মনে হয় সড়কটিতে ছোট ছোট পুকুর বানানো হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তিদের অবহেলায় সড়কটি আজ এভাবেই মুখ থুপড়ে পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় বেহাল সড়কটি যেন রাণীনগর উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকার লাখ লাখ মানুষের চলাচলে গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সড়কটির সংস্কার কাজের জন্য আবার নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
জানা যায়, রাণীনগর উপজেলা সদরের বাসট্যান্ড গোলচত্বর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত মোট ২২ কিলোমিটার সড়কে যানবাহন চলাচলে চাপ বাড়লে এবং এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে এলজিইডি থেকে সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সড়কটি রাণীনগর-আবাদপুকুর থেকে কালীগঞ্জ হয়ে নাটোরের সিংড়ার ঢাকা-রাজশাহী মহা সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। সড়ক জুড়ে ২৬টি কালভার্ট ও ৪ টি ব্রিজ পূর্ণ নির্মাণ এবং সড়কটি টিকসই, মজবুত ও প্রসস্থ্য করে পাকা করণের লক্ষে ২০১৮ সালে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে টেন্ডার দেয়া হয়। এতে এক্স্রপেকট্রা ওয়াহিদ কনস্ট্রাকসান জয়েন্ট ভেনচার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজ ও কালভার্ট নির্মাণের টেন্ডার পান। দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার সড়ক, ২৬টি কালভার্ট ও ৪ টি সেতু নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয় ১০৫ কোটি টাকা। এরপর সড়কের সমস্ত কার্পেটিং তুলে রাস্তায় রোলার দিয়ে কিছু জায়গায় পাথর ফেলেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এবং কয়েকটি কালভার্ট ও ব্রিজ ভেঙ্গে নির্মাণ করে কাজ বন্ধ করে দেয় ।
গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেন। অতিরিক্ত সময়েও কাজ শেষ করতে না পাড়ায় গত বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটির সংস্কার কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলসহ ৫ কোটি টাকা জরিমানা করে আবার নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরই মধ্যে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর বন্ধ হয়ে যায় সড়কটির কাজ। উচ্চ আদালত গত বছরের ২৯ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সরকারের) পক্ষে রায় দেন। এরপরেও সড়কটির কাজ আর শুরু করা হয়নি।
করজগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ছাত্তার হোসেন বলেন, গত প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস আগে রোলার দিয়ে সড়কটি ডলে রাখা হয়। তারপর আর কোন কাজ হয় নি। বর্তমানে সড়কটিতে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
কালিকগ্রামের বাসিন্দা আইজুল হক বলেন, আমাদের এই রাস্তা দিয়ে চলা চলা করতে ভয় লাগে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা হাসপাতালে ঠিক ভাবে নিয়ে যেতে পারি না। যেখানে আগে যেতে ৪০ মিঃ সময় লাগতো এখন ১ঘন্টার বেশি লাগে।
ভ্যান চালক রাজ্জাক বলেন, রাস্তা খারাপের কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সড়কের আবার ধুলাবালি এবং বৃষ্টি হলে কাদা-পানিতে পরিণত হয়। ফলে এই সড়কে ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়।
সিএনজি চালক সুরুজ মিয়া বলেন, গর্ভবতি নারী কিম্বা জটিল কোন রুগীদের নিয়ে আমরা খুব ভয়ে গাড়ি চালাই। আবার রাস্তয় গর্ত থাকার কারনে মালামাল পরিবহণে ঝুঁকি থাকে। তাই দ্রুত এই সড়কটি মেরামতের জন্য দাবী করেন।
এ বিষয়ে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, সকল জর্টিলতা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সড়কটির সংস্কার কাজের জন্য নতুন করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম.এ. জাহেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে মালামাল আনতে শুরু করেছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই সড়কের কাজ শুরু হবে এবং জনসাধারনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।