চীন থেকে আমদানি করা ডেমু ট্রেনগুলো দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে ছিল। দেশের প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল হচ্ছে সেগুলো। নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিজেল ওয়ার্কশপে সচল করা হয়েছে পাঁচটি ডেমু ট্রেন। একই প্রযুক্তিতে বাকি ১৫টি ডেমু ট্রেনও মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু ট্রেন আমদানি করা হয় ২০১৩ সালে। উদ্দেশ্য ছিল ওই সব ট্রেনের মাধ্যমে কাছাকাছি দূরত্বে বেশি পরিমাণে যাত্রী পরিবহন করা। চীনের তানসন ইন্টারন্যাশনাল ও ডানিয়াল টেকনিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ডেমু ট্রেনগুলোর নির্মাতা। কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত ওই ট্রেনগুলো বিশেষ সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত। এ প্রযুক্তি ডেমু ট্রেন সরবরাহকারী চীনের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে কখনো দেয়নি।
এর মডিউল বিকল হলে নতুন মডিউলের সঙ্গে সফটওয়্যার সেটআপ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিত। এর জন্য ধরনা দিতে হতো চীনের প্রকৌশলীদের কাছে, যা ছিল ব্যয়বহুল। একটি ডেমুতে ৪০টি মডিউল আছে। এর একেকটির দাম প্রায় সাত লাখ টাকা। চীনা প্রকৌশলীরা প্রযুক্তি হস্তান্তর না করায় একটির পর একটি ডেমু ট্রেন বিকল হতে থাকে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক মো. সাদেকুর রহমান বলেন, দেশে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ওই ট্রেনগুলো। স্বল্প দূরত্বের জন্য আনা হলেও দীর্ঘ দূরত্বেও চালানো হয়েছে এগুলো। মেরামতের অভাবে ২০২০ সালে ট্রেনগুলো বিকল হয়ে যায়। এগুলো সচল করতে উদ্যোগ নেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী।
ডেমু ট্রেনগুলো সচল করার ব্যাপারে প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আসাদুজ্জামান ডেমু ট্রেন নিয়ে কাজ শুরুর আড়াই মাসের মধ্যে কী ধরনের প্রযুক্তিতে এগুলো চালাতে হবে, তা বের করেন। ব্যয়বহুল মডিউলের বদলে বসানো হয় মাত্র দুটি কন্ট্রোলার। আর তা দিয়েই প্রথম একটি ডেমু ট্রেন সচল করা হয়।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা পাঁচ সেট ডেমু ট্রেন সচল করতে সক্ষম হয়েছি। দুই মুখে দুটি ইঞ্জিন, মাঝখানে একটি কোচ। এসব আধুনিক ট্রেনে পর্যায়ক্রমে লোড বাড়িয়ে পরীক্ষামূলক চলাচল সম্পন্ন করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক আটটি চলাচলের প্রতিটিতে আমরা সাফল্য পেয়েছি। একটি ডেমু ট্রেন মেরামতে ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা, চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তি নিয়ে মেরামত করতে খরচ হতো প্রায় ৩ কোটি টাকা।’
পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার প্রধান নির্বাহী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশি প্রযুক্তিতে ডেমু ট্রেন মেরামত আমাদের বিশাল এক অর্জন। একে বড় সাফল্য বলা যেতে পারে। এ প্রযুক্তিতে ট্রেন মেরামত করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। তবে এ ধরনের ডেমু মেরামতের জন্য আমাদের ডেডিকেটেড রেলওয়ে কারখানা প্রয়োজন।’
মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘অকেজো ডেমু ট্রেন মেরামত করে আমাদের প্রকৌশলীরা যুগান্তকারী সাফল্য দেখিয়েছেন। এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে আমাদের জনবল দক্ষ হয়েছে। তাঁদের মাধ্যমে পরবর্তী মেরামতকাজ সহজ হবে। আমরা সব কটি ডেমু ট্রেন মেরামত করব, যা দিয়ে বাড়ানো হবে গণপরিবহনসেবা।’