প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার একটি আবাসন প্রকল্পের মূল্যবান পুরাতন মাল-সামগ্রী গোপন নিলামের মাধ্যমে অন্যের নাম দেখিয়ে নিজের নামে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাদেকুল হক নুরুর বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবী সবার অজান্তে আবাসনের পুরাতন সামগ্রী অর্ধেকেরও কম মূল্যে নামমাত্র নিলামে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমোর আবাসন প্রকল্পে নতুন ভবন নির্মাণের নিমিত্তে প্রকল্পের পুরাতন লোহার এ্যাঙ্গেল, টিন, সিড়ি এবং ইট নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন উপজেলা প্রশাসন। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাদেকুল হক নুরু গোপনে কাগজে কলমে নিলাম দেখিয়ে আবাসন প্রকল্পের মূল্যবান পুরাতন সামগ্রী নামমাত্র মূল্যে হাতিয়ে নেয়ার পায়তারার অভিযোগ উঠে। নিলামে অংশ গ্রহনে আগ্রহীরা নিলামের তারিখ জানার জন্য বিভিন্ন সময় ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করলেও এবিষয়ে তথ্য প্রদান করেননি সংশ্লিষ্ট ইউপি পরিষদ। এরপ্রেক্ষিতে গত ১সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক, আব্দুস ছালাম, ইউসুফ আলী, জাহেদুল মিয়া এবং মোস্তফা কামাল উম্মুক্ত নিলামের দাবীতে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেন। এরপরও গত ৪ সেপ্টেম্বর গোপনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাদেকুল হক নুরু তার নিকটাত আত্নীয় ও স্থানীয় এক সার ডিলার ইউসুফ আলী বাবুর নামে কাগজে কলমে নিলাম দেখান। পরে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ৭ সেপেটম্বর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম। কমিটির অন্য ২সদস্য হলেন, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার (তথ্য ও যোগাযোগ অধিদপ্তর)। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
এদিকে অভিযোগকারীরা জানান, অভিযোগ দেয়ার পর রাতারাতি ওই আবাসন প্রকল্পের আনুমানিক ২৫০কেজি মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
অভিযোগকারী মশিউর রহমান বিপ্লব বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে জানতে পারি ওই দিন সকাল ১০টার পূর্বে ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যান সাদেকুল হক নুরু সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা কাগজে কলমে মাত্র আট লাখ পয়ত্রিশ হাজার টাকায় তার নিকটতম আত্নীয় ও প্রতিবেশি মিল-চাতাল মালিক ইউসুফ আলী বাবুকে নিলাম ডাককারী দেখিয়ে ওই সব মূল্যবান সামগ্রী চেয়ারম্যান নিজেই হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছেন। একারণে ভূয়া নিলাম বাতিল করে উম্মুক্ত নিলামের দাবীতে ৬ সেপ্টেম্বর ইউএনও সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছি। কিন্তু অভিযোগ হওয়ার পর রাতারাতি মালামাল সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
অপর অভিযোগকারী বাদশা আলম দুলাল বলেন, আসলে নিলাম হয়নি বা কোন প্রচার-প্রচারনা করাও হয়নি। কোন সরকারি কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন না। কাগজে কলমে নিলাম দেখিয়ে বিপুল পরিমান সরকারি রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা চলছে। তাই বিষয়টি জানার পর উম্মুক্ত নিলামের দাবীতে আমি ওই দিনই ( ৪সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছি।
এলাকাবাসী জানান, ওই আবাসন প্রকল্পের পুরাতন মাল-সামগ্রীর বাজার মূল্য ত্রিশ লক্ষাধিক টাকা হবে। কাগজে নিলাম দেখিয়ে চেয়ারম্যানই ওই সব মূল্যবান মাল সামগ্রী হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও তারা জানান।
অভিযোগ অস্বীকার করে ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাদেকুল হক নুরু বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিলাম করা হয়েছে। নিলামে ৬জন অংশ গ্রহন করেছেন। তদন্ত সম্পর্কে তিনি জানান, তদন্তে যা হবে মেনে নিবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।