রানি ২য় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরপরই আলোচনায় ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। জনগণের অর্থে রাজপরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে আপত্তি আছে দীর্ঘকাল ধরেই। প্রশ্ন আছে গণতন্ত্রের যুগে রাজবাড়ির যৌক্তিকতা নিয়ে। এমনকি আপত্তি আছে খোদ রাজপরিবারেই। রাজকীয় আইন-কানুনে আটকে থাকতে চাননা নতুন প্রজন্মের অনেক সদস্যই। নিজের জীবদ্দশায় এসব সংকট বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করেছেন রানি। তবে নতুন রাজা চার্লসের সক্ষমতা আর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকেরই।
ব্রিটেনের প্রয়াত সম্রাজ্ঞীর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার জনপ্রিয়তা। সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা আর সমর্থন। দীর্ঘ ৭ দশক ধরে সিংহাসনে থাকা রানি এলিজাবেথের মৃত্যুতে অবসান হলো একটি দীর্ঘ ও ঐতিহাসিক অধ্যায়ের। সেই সাথে নতুন করে সামনে আসছে কিছু প্রশ্ন।
ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের ইতিহাস ১২’শ বছরের পুরোনো। রাজা-রানির প্রতীকী ক্ষমতার ইতিহাসও শত বছরের পুরোনো। ঐতিহ্য প্রিয় ব্রিটিশদের বড় অংশের রাজপরিবারের প্রতি সমর্থন থাকলেও, ২১ শতকে রাজতন্ত্র বিরোধীর সংখ্যাও কম নয়।
এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে রাজপরিবারের প্রতি সমর্থন কমেছে নাটকীয়ভাবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো ভূমিকা না থাকা রাজপরিবারের পেছনে বিশাল অঙ্কের ব্যয় নিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ। এমন পরিস্থিতিতে রাজা হিসেবে চার্লসের অভিষেক জন্ম দিচ্ছে নানা সংশয়ের।
প্রিন্সেস ডায়ানা ইস্যুতে এখনও চার্লসের প্রতি ক্ষোভ পুষে রেখেছেন ব্রিটিশদের অনেকেই। আরও বেশ কিছু ইস্যুতে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আছে প্রশ্ন।
ব্রিটিশ নাগপ্রিকদের অনেকেই বলছেন, ডায়ানার সাথে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। আরও অনেক বিষয়েই নেতিবাচক ভূমিকায় পেয়েছি চার্লসকে। আমার মনে হয় না মায়ের মতো পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন তিনি।
এর আগে, ২০২০ সালে প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান মার্কেলের রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণায় আরেকবার আলোচনায় আসে রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। অপরাহ উইনফ্রে শো’তে পরিবারের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগও করেন হ্যারি-মেগান জুটি। রাজকীয় নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে চায় না নতুন প্রজন্মের আরও কেউ কেউ। এতোকাল রানি এলিজাবেথ বিচক্ষণতার সাথে এ পরিস্থিতি সামাল দিলেও, এমন ইস্যুতে কিং চার্লসের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকের মনে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক কেহিন্দে অ্যান্ড্রুস বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখলে রাজপরিবার বেশ শক্তিশালী। প্রিন্স অ্যান্ড্রু, মেগান মার্কেলের মতো ইস্যুর পরও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন রানি। কারণ তার প্রতি ব্রিটিশদের একটি আবেগ কাজ করতো। তবে চার্লসের বিষয়টা ভিন্ন।
ব্রিটিশ রানিকে রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদা দিতো এমন অনেক দেশও আজকাল পাল্টাতে চাচ্ছে অবস্থান। দূরের এক দেশের প্রতীকী রাজতন্ত্র মানতে রাজি নয় জ্যামাইকা, বাহামার মতো দেশগুলো। সবশেষ রানিকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়েও দেয় বার্বাডোজ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রত্যাশা আর চাপ সামলাতে কিং চার্লস কতটা দক্ষতা দেখাতে পারেন তার ওপর নির্ভর করছে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ।