ভোলা প্রতিনিধি ,কামরুজ্জামান শাহীন
তরমুজ মৌসুমি ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু চরফ্যাশনে গ্রীস্মকালীন ব্ল্যাক বেবী ও বাংলালিংক তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় এখন আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চরফ্যাশনের কৃষক মোতাহার হোসেন।
চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার জাহানপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ওমরাবাজ গ্রামের বাসিন্দা মোতাহার হোসেন। তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে মাচায় মেটালের বাংলা লিংক ও ইউনাইটেডের ব্ল্যাক বেবী নামে দুই জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। মাচার উপর চাষ করা এসব কালো ও সবুজ ডোরাকাটা রঙের রসালো মিষ্টি তরমুজ নেটের ভেতরে ঝুলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) প্রকল্পের আওতায় “লবনাক্ত জমিতে উচ্চ মূল্যের ফসল চাষের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি” শীর্ষক উপ-প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা গ্রীষ্মকালীন ব্ল্যাক বেবী ও বাংলা লিংক তরমুজ চাষ করার জন্য প্রকল্প হইতে উন্নত প্রযুক্তি মালচিং পেপার, বীজ, সার, মাচার জন্য জাল, রসি ও শ্রমিক খরচ বাবদ নগদ অর্থ তাকে সরবরাহ করছেন। সংস্থাটির সার্বিক সহযোগিতায় ৪০ শতাংশ জমিতে এই দুই জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক মোতাহার হোসেন।
শশীভূষণ শাখা গ্রামীন জনউন্নয়ন সংস্থার সহকারী কারিগরী কর্মকর্তা মো. রাজিউল্লাহ রাজু বলেন, তাকে উন্নত প্রযুক্তি মালচিং পেপার, বীজ, সার, মাচার জন্য জাল, রসি ও শ্রমিক খবর বাবদ নগদ অর্থ এবং নিয়মিত দিকনিদের্শনা দিচ্ছেন।
মোতাহার হোসেন ৪০ শতাংশ জমিতে তরমুজের বীজ রোপণ করেন। প্রায় ৩০/৩৫ দিনের মধ্যে তরমুজের ফুল ও ফল আসে এবং ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে ফলন কেটে বিক্রি করেন। কৃষক মোতাহার হোসেন এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। বর্তমানে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ তরমুজ রয়েছে তার জমিতে। এর মধ্যে কোনোটার ওজন ৪ কেজি থেকে দেড়কেজি হয়েছে।
পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এসবই তিনি গ্রামীন জনউন্নয়ন সংস্থার অফিসের পরামর্শে করেছেন। এতে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিচ ১৫০ টাকা। সেই হিসেব করে লাভের আশায় মোতাহার হোসেন মুখে প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে।
কৃষক মোতাহার হোসেন বলেন, ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছি। কিন্তু আমি বিকল্প আয়ের সন্ধান করতে থাকি। এই সময় গ্রীস্মকালীন মাচায় তরমুজ চাষ সম্পর্কে স্থানীয় গ্রামীন জনউন্নয়ন সংস্থার অফিস থেকে জানতে পারি তারা উন্নত প্রযুক্তি মালচিং পেপার, বীজ, সার, মাচার জন্য জাল, রসি ও শ্রমিক খবর বাবদ নগদ অর্থ এবং নিয়মিত দিকনিদের্শনা দিয়েছেন। এরপর এ বিষয়ে সামান্য পরামর্শ নিয়ে অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ করি। এজন্য আমার এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। বর্তমানে ৩ থেকে ৪শত তরমুজ জমিতে রয়েছে। এভাবে উৎপাদন অব্যাহত থাকলে আশা করছি আমার সব খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা লাভ থাকবে। আগামীতে ১০০ শতাংশ জমিতে গ্রীস্মকালীন এ তরমুজ চাষ করার আগ্রহ রয়েছে।
অপর কৃষক হযরত আলী বলেন, আমি মোতাহার হোসেনের তরমুজ চাষ দেখেছি। তিনি তরমুজ চাষে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন বলে তার খরচও অনেক কম হয়েছে। তাই তার অনেক লাভ হবে। গ্রামীন জনউন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আগামী গ্রীস্মকালীন এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ আমিও করবো। শুধু আমি না এলাকায় এমন আরও অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে তরমুজের চাষ করবে।
গ্রামীন জনউন্নয়ন সংস্থা মো. রাজিউল্লাহ রাজু বলেন, মোটিভেশনের মাধ্যমেই কৃষক মোতাহার হোসেন গ্রীস্মকালীন মাচায় তরমুজ চাষ করেছেন। আশা করছি আগামী বছর অফ সিজনে উপজেলা জুড়ে এই জাতের তরমুজ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা অনাবাদি জমিতে কৃষককে সকল প্রকার সহযোগিতা দিয়ে গ্রীস্মকালীন মাচায় তরমুজ চাষে উপজেলায় ১০০ জন কৃষককে উৎসাহিত করেছি। বর্তমানে তারা এ তরমুজ চাষ করে সফল। তবে সবচেয়ে ভালো ফলন ও লাভবান হয়েছেন চরফ্যাশনের শশীভূষনের কৃষকরা।
তিনি আরো বলেন, মোতাহার হোসেন গ্রীস্মকালীন তরমুজ চাষ করে ইতো মধ্যে ভালো লাভবান হয়েছেন। এদিকে, মাচায় তরমুজ চাষ দেখতে প্রতিদিন আশপাশ ও বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও অন্য লোকেরা তার কাছে আসছেন। কীভাবে আগামীতে তারা নিজ নিজ জমিতে তরমুজ চাষ করবেন সে সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন।