কেউ কেউ বলছেন কলকাতার নাগরিকদের পাতে ইলিশ পড়ছে কেজি হাজার ১২শ’ টাকায়। আর বাংলাদেশে এক কেজি ইলিশ খেতে লাগে এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা।
কিন্তু যারা এটা বলছেন তারা মনে করছেন ভারতে যে ইলিশ যায় তার প্রতিটির ওজনই এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি। সেই বিবেচনায় তারা এই বিতর্ক তুলেছেন বলে মনে করেন ইলিশ রপ্তানিকারকেরা। তারা বলছেন, ইলিশের আকার বা গ্রেড সম্পর্কে তাদের ধারণা হয়তো কম। কারণ এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ যেমন এক হাজার ২০০ টাকা। আবার প্রতিটি ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৬০০-৭০০ টাকা।
চাঁদপুরের মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার জানান, সোমবার চাঁদপুর আড়তে প্রতিটি এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ হাজার টাকা। তাতে প্রতিটি এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম পড়ে এক হাজার ২৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা।
চাঁদপুরে ইলিশের আরো দুইটি গ্রেড আছে। প্রতিটি ইলিশের ওজন ৮০০-৯০০ গ্রাম হলে তার প্রতি মণের দাম পড়ে ৪০ হাজার টাকা। প্রতি কেজির দাম এক হাজার টাকা। আর যেগুলোর ওজন ৬০০-৭০০ গ্রাম তার মণ ২৮ হাজার টাকা। প্রতি কেজির দাম ৭০০ টাকা। তার কথা, এক হাজার ৩০০ টাকায় একটি ইলিশ পাইকারি কিনলে কলকাতার বাজার পর্যন্ত আরো ১০০ টাকা খরচ পড়ে।
আড়তদারদের কাছ থেকে না কিনে সরাসরি জেলেদের কাছ থেকেও ইলিশ কিনতে পারেন রপ্তানিকারকেরা। তাতে দাম একটু কম পড়ে। কিন্তু খুব বেশি হেরফের হয় না বলে জানান তিনি। কারণ এখন মোবাইল ফোনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় সবাই বাজারদর জানেন।
মোংলার জেলে বিদ্যুৎ মন্ডল জানান, তারা আড়তেও দেন আবার সরাসরি রপ্তানিকারকদের কাছেও পাইকারি বিক্রি করেন। তিনিও জানান দামের খুব বেশি পার্থক্য হয় না। আড়তদার একটা আড়তদারি পান।
তিনি জানান, ওই অঞ্চলে ইলিশের দুইটি গ্রেড করা হয়। এক কেজি এবং তার উপরে একটি গ্রেড আর এক কেজির নিচে আরেকটি গ্রেড। তিনি জানান, মোংলায় সোমবার এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ প্রতিটি এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মন ৪৮ হাজার টাকা। এর নিচে যে ইলিশের ওজন তা গড়ে ৩০ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকা।
রপ্তানিকারকেরা জানান, তারা গড়ে ইলিশ প্রতি কেজি ১০ ডলার (এক ডলার ৯৫ টাকা হিসেবে ৯৫০) দামে রপ্তানি করেন। তবে রোববার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানির ক্ষেত্রে এক ডলারের দাম ৯৯ টাকা করেছে। তাহলে রপ্তানিকারকেরা ব্যবসা করেন কীভাবে। জবাবে এই মৌসুমে প্রথম আট হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানিকারক বরিশালের মহিমা এন্টাপ্রাইজের মোহাম্মদ টুটুল মিয়া বলেন, আমরা তো সব এক কেজি ওজনের ইলিশ পাঠাই না। গড়ে ৩০, ৩২, ৪০ হাজার টাকা মণ কিনি। কিন্তু পাঠানোর সময় তো আমরা সব ১০ ডলার কেজি হিসেবে পাঠাই। তাহলে ব্যবসা হবে না কেন?। আর ডলারের রেটও তো এখন ১০৭ টাকা করে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি যে ইলিশ পাঠিয়েছি তার প্রতিটির ওজন ৫০০ থেকে ৯০০ গ্রাম। এই ইলিশের দাম তো কম। আমরা আমাদের ব্যবসা হিসেব করেই ইলিশ কোন সাইজের কতগুলো দেব তা নির্ধারণ করি। এক মণে আমরা ১০টার বেশি এক কেজি ওজনের ইলিশ দেই না।
সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমাদের দেয় না৷
এদিকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধে সরকারকে রোববার আইনি নোটিশ দিয়েছেন অ্যাডভেকেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। তিনি তার আইনি নোটিশের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ভারতে ইলিশ রপ্তানি করার কারণে বাংলাদেশে ইলিশের দাম বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছেন না। বাংলাদেশের বাজারে এক কেজি ইলিশ এক হাজার ৪০০ টাকার নিচে নাই। কিন্তু ভারতে এক হাজার ২০০ টাকার নিচে। আর আমাদের রপ্তানি নীতি অনুযায়ী ইলিশ রপ্তানি উন্মুক্ত নয়। দেশের মানুষ যেখানে ইলিশ খেতে পারছে না দামের কারণে সেখানে রপ্তানি গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশের খুচরা বাজারে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের কেজি কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ টাকা। তবে যে ইলিশের ওজন ৬০০-৮০০ গ্রাম তার কেজি ৭০০-৯০০ টাকা।
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দুই হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ৫০ মেট্রিক টন করে ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের রপ্তানি করতে হবে। সৌজন্যে : ডয়চে ভেলে