আশরাফুল ইসলাম,নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সাবেক ও বর্তমান এমপি’র মাঝে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। এক পর্যায়ে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এ ঘটনা ঘটে। লক্ষাধীক ভরা সভায় সাবেক সাংসদ ও বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয় সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার। এমন ঘটনায় নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সোমবার এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও আসে এ প্রতিবেদকের হাতে।ভিডিওতে দেখা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম উত্তেজিত স্বরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর একই সাড়িতে বসে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সামনে টেবিলে মাইক্রোফোন ফেলে দিয়ে আকরাম হোসেন চৌধুরীর কাছে তাকে ইঙ্গিত করে কেন বক্তব্য দিলেন তার ব্যাখ্যা জানতে চান। তখন আকরাম হোসেন চৌধুরী মাইক্রোফেন হাতে নিয়ে বক্তব্য দিতে লাগলে এর কিছুক্ষণ পর তার কাছে থেকে মাইক্রোফোন জোড় করে ছিনিয়ে নিয়ে তিনি আবার উত্তেজিত হয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন বর্তমান এমপি।
ঠিক কি কারনে এমনটা ঘটলো বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সাবেক সংসদ সদস্য ও বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ( বিএমডিএ) ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, (বদলগাছী-মহাদেবপুর নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার) তিনি অসয্যমূলক কাজ করেছেন যা করার অধিকার তিনি রাখেন না কারন আমি বক্তা হিসেবে তাদের নিমন্ত্রনে আমি সেখানে গেছিলাম তিনি কেনো এই কাজ করলেন সেটা আমার সঠিক জানা নাই,বিলাশ বাড়ী বর্ধিত সভায় বক্তব্যে আমি আমার সময় যে উন্নয়ন মূলোক কাজ করেছি সেই কথা গুলো জনগনের মাঝে উপস্থাপন করছিরামকিন্তু সেই কাজের দাবি উনারা করছেন। তিনি আরও বলেন, ওই ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি ভাগ হয়ে গেছে। অথচ সকলেই বলে বিলাশবাড়ী আওয়ামী লীগের ঘাটি। যদি এমনটাই হয় তাহলে গত নির্বাচনে নৌকা কেনো পরাজিত হলো। আমার প্রশ্ন হলো- যেখানে ঘাটি ছিলো তাহলে হঠাৎ করে ভেঙে গেলো কেনো। তখন উদহারণ দিয়ে বলি- সত্যিকার অর্থে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন অনেক সময় আমরা অবহেলা করি। দল নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু বিরোধী দলীয় যখন ক্ষমতায় থাকে তখন আমাদের অনেক চিন্তা করতে হয়। মরহুম ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নু ১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তার সময়ে দুই উপজেলায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। আমার সময়ে অনেক উন্নয়ন করেছি। উন্নয়ন হচ্ছে আমার সরকারের আমলে, আর বিএনপিরা সত্য-মিথ্যা বলে মানুষকে জাগ্রত করার চেষ্টা করছে।তিনি বলেন, বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছিলাম- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকলে মন্ত্রী ও সচিব সহ বিভিন্ন দপ্তর সহযোগীতা করে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছলিম উদ্দিন তরফদার এমপি মাইক্রোফোন কেড়ে নেন।তাকে আমি বুঝাতেই পারিনি এ বক্তব্যের শেষ পয়েন্ট টা আসলে কি ছিলো। মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে তিনি নানান ধরণের তর্কবিতর্ক শুরু করে দিলেন। ওইদিন বিলাশ বাড়ী বর্ধিত সভায় লক্ষাধীক জনসংগমে হাজারো ক্যামেরার সামনে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। প্রতিপক্ষকরা ছোট করার জন্য অনেক গালিগালাজ করে।কিন্তু যদি তিনি বুঝতেন এ গালিগালাজ তাকেই ছোট করবে তাহলে হয়তো বলতো না।এটা হচ্ছে কি রাজনিতিতে আপনাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে সেই নিতিতে বলার চেয়ে শুনতে হবে। আমি এ ঘটনা বিবেচনা করার দায়িত্ব্য মহাদেবপুর,বদলগাছী জনগনের উপর ছেড়ে দিলাম।
এ বিষয়ে নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার বলেন, আমি সেদিন বলেছিলাম সামনে সম্মেলন উপলক্ষে যে উদ্যেশে বর্ধিত সভা হচ্ছিল সে বিষয়ে আপনে (ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী) কথা বলেন। কিন্তু তিনি বর্ধিত সভার বিষয়ে না বলে তার সময়ে কি কি উন্নয়ন করেছেন সেসব কথা বলছিলেন। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলেন। ওই ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী সিলেকশনে যদি ভুল হয় তাহলে ২০১৪ সালে আপনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের পরও কেন আমার কাছে পরাজিত হলেন। এর জবাব টা কে দিবে? একজন ভাল এমপি হতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে করে মন্ত্রী ও সচিবরা গুরুত্ব দিবেন। এটা দিয়ে তিনি আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন। এ কারণে তাকে ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা) ঠিক রেখে কথাগুলো বলতে বলেছিলাম। কোন জায়গা কি বক্তব্য দিচ্ছেন আপনে। জনগণ হচ্ছে ক্ষমতার উৎস ও মালিক। জনগন চাইলে সম্মান দিয়ে চেয়ারে বসাতে পারে আবার নামিয়েও দিতে পারে।মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি সেলিম বলেন, নৌকার জন্য যখন আপনার এতো ভালবাসা তাহলে মাইক্রোফোন নিয়ে একটু বলেন ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় কোথায় কার জন্য ভোট চেয়েছেন কি না বা তার কোন প্রমান দেখাতে পারবেন। তখন তিনি মাইক্রোফোন নিয়ে বললেন- ওই সময় বরেন্দ্র বহুমূর্খী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকায় ভোট চাওয়া সম্ভব হয়নি। তখন আমি মাইক্রোফোন তার কাছ থেকে নিয়ে নেই। এটাই ছিল মূল কথা। তবে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার মতো আসলে ঘটনা হয়নি বলে জানান তিনি।