কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর নানা চাপ প্রয়োগ করে আমদানি পর্যায়ে ডলারের দামে একটি স্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছিল। সব ব্যাংক ৯৫ টাকা ৫ পয়সা দরে আমদানি পর্যায়ে ডলার বিক্রি করছিল। কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারে নতুন দর কার্যকর হওয়ার পর সে স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে আমদানি পর্যায়ে ডলারের দামে এখন কোনো স্থিরতা নেই। একেক ব্যাংক একেক দরে ডলার বিক্রি করছে। সর্বনিম্ন ১০১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে বিক্রি করছে। রপ্তানির ডলার সব ব্যাংকে ৯৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রপ্তানির চেয়ে আমদানিতে প্রতি ডলারের দাম ব্যাংক ভেদে সর্বনিম্ন ২ টাকা ও সর্বোচ্চ ৯ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে একদিকে রপ্তানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ভোক্তার ওপর চাপ তৈরি করছে।
সূত্র জানায়, বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলো দুই মাস আগে থেকেই বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ১১০ থেকে ১১১ টাকা রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করছিল। ফলে তারা আমদানিতে করপোরেট সেলের আওতায় ওইসব ডলার ১১১ থেকে ১১২ টাকা করে বিক্রি করছিল। কিন্তু তখন সব ব্যাংকে আমদানির জন্য প্রতি ডলারের দাম ছিল ৯৫ টাকা ৫ পয়সা। বিদেশ থেকে চড়া দামে সরকারি ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) কারিগরিক কমিটি বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউজের ডলারের দাম বেঁধে দেওয়ার সুপারিশ করে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকও সায় দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাফেদা যৌথভাবে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি বিল কেনার সর্বোচ্চ দর ৯৯ টাকা বেঁধে দেয়। এই দর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হলে বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। শুরুতে বাফেদা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নতুন দর ৫ কার্যদিবস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হবে। বাজারে এর প্রভাব দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রোববার ৫ কার্যদিবস অতিক্রম হয়েছে। তবে এদিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাজার বন্ধ ছিল। ফলে কোনো নতুন সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে বৃহস্পতিবার বাফেদা’র কারিগরিক কমিটি একটি বৈঠক করে ডলারের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। তারা বাজার পরিস্থিতি আরও এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সময় চেয়েছে। হঠাৎ করে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না। এদিকে বাজারে ডলারের দর কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে আমদানি পর্যায়ে ডলারের দামে কোনো স্থিরতা আসেনি। ডলারের দাম ব্যাংক ভেদে ১৫ থেকে ২৫ পয়সা পর্যন্ত কমেছে। যা দাম বৃদ্ধির তুলনায় খুবই কম। নতুন দর কার্যকর হওয়ার আগে আমদানি পর্যায়ে ডলারের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৯৫ টাকা ৫ পয়সা। নতুন দর কার্যকর হওয়ার পর এর দাম এক লাফে বেড়ে ১০১ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় উঠে। এই দফায় ডলারের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ১৪ টাকা। যা এখনও বহাল রয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে কম দামে ডলার বিক্রি করছে এবি ব্যাংক ১০০ টাকা ৭৬ পয়সা দরে। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ১০৮ টাকা ৫ পয়সা দরে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউসিবি ১০৪ টাকা ৯০ পয়সা, পূবালী ব্যাংক ১০৪ টাকা করে ডলার বিক্রি করছে। সরকারি খাতের সোনালী ব্যাংক ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা, রূপালী ব্যাংক ১০৭ টাকা ৭০ পয়সা, অগ্রণী ব্যাংক ১০৪ টাকা ৪৫ পয়সা, জনতা ব্যাংক ১০৬ টাকা ৩০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছে।
আমদানির বড় অংশই সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অথচ সরকারি ব্যাংকগুলোতেই আমদানি ডলারের দাম বেশি। ফলে আমদানির খরচও বেশি পড়ছে।
সূত্র জানায়, নতুন দর কার্যকরের আগে সরকারি ব্যাংকগুলো বিদেশ থেকে ১১০ থেকে ১১১ টাকা করে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করত। কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের রেমিট্যান্সের দর সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা বেঁধে দেওয়ার পর ওই দামে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমে গেছে। এদিকে রপ্তানিতে ডলারের দর ৯৯ টাকা বেঁধে দেওয়ার পর রপ্তানিকারকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এতে রপ্তানি বিল নগদায়ন করার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।