কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী নদ থেকে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন কাজী মাহমুদুর রহমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) উলিপুর।
গত শনিবার তিনি হাতিয়া ইউনিয়নের পালের ঘাট ও হাতিয়া নয়া ডারা গ্রামে স্বপ্নসিঁড়ি নামের দুটি অবৈধ বালু মহাল সরেজমিন পরিদর্শন শেষে এ নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি বলেন,”পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃক নদী শাসনের কাজে ব্যবহৃত বালু উত্তোলন ছাড়া অবৈধ পন্থায় এক মুঠো বালু অন্য কোথাও যাবে না । তাছাড়া এটা কোন স্বীকৃত বালুমহাল নয়”। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের ঘোষণাকে এলাকার অধিকাংশ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। সদ্যোজেগে ওঠা চরের মানুষরাও এ সিদ্ধান্তে আনন্দিত হয়েছেন।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা সদরের পূর্বদিকে হাতিয়া ইউনিয়নের অবস্থান। বিগত তিন দশকের ব্যবধানে ইউনিয়নটির সিংহ ভাগ এলাকা ব্রম্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায় । বর্তমানে ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুর বাজারটি ব্রহ্মপুত্র নদের একদম কিনারে রয়েছে ।
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এলাকাটির নামি-দামি-বিত্তশালী, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অসংখ্য মানুষ ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙ্গনে বসত ভিটাসহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এভাবেই হাতিয়া ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে থাকে। এরকম অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী কালের প্রত্যেকটি সরকার আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ব্রম্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে এলাকাটি রক্ষায় নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালান। কিন্তু এলাকা বাসীর দুর্ভাগ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের (দায়িত্ব প্রাপ্ত) সীমাহীন দুর্নীতি, অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ, গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঠিকাদারদের প্রাক্কলন অনুযায়ী সঠিক সময়ে ঠিক ভাবে কাজ বাস্তবায়নে ধীরগতি ও স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গন বন্ধের পরিবর্তে ভাঙ্গন আরও ত্বরান্বিত হয়।
আর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও বসতভিটা, নিঃস্ব হয়ে যায় অসংখ্য মানুষ। করাল গ্রাসি নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আহাজারিতে নদীর পারের বাতাস এক সময় ভারি হয়ে উঠতো। এরকম করুন পরিস্থিতির মাঝেও দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ ভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের মত বেআইনি কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রভাব খাটাতেন বলে এলাকায় ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, অবৈধ ব্যবসায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর রক্ষা প্রকল্পের জন্য বালুর প্রয়োজন উল্লেখ করে তারা নির্বিঘ্নে একাধিক ভলগেট ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে শত শত ট্রাক বালু বিক্রি করে আসছিল। অবৈধ এ ব্যবসার মাধ্যমে অনেকেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তাদের অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে জেগে ওঠা রামখানা ও নীলকন্ঠ চরের ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকলে ওই চরের মানুষ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। এসব ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে সিন্ডিকেটের লোকজন তাদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিতো। একপর্যায়ে তাঁরা বিষয়টি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে অবহিত করেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) উলিপুর কাজী মাহমুদুর রহমান সরেজমিন তদন্ত শেষে হাতিয়ার পালের ঘাট,অনন্তপুর বাজার ব্রিজ পয়েন্ট ও নয়াডারা স্বপ্নসিঁড়ি পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করেন । প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে নদীর পাড়ের মানুষ আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করে।
হাতিয়া ইউনিয়নের পালের ঘাট এলাকায় ব্রম্মপুত্র নদের একদম কিনার থেকে জনৈক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে নদীশাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে । এভাবে পাউবো’র প্রকৌশলীদের নাকের ডগায় একাধিক ঘটনা থাকলেও তারা নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। এভাবেই নদী শাসনের নামে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।