আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীতার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করেন (সূরা মুহাম্মদ: ২২-২৩)।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য ও খোঁজখবর রাখা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নিজেও বান্দাদের সুসম্পর্ক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘(তারাই বিবেকবান) আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, আর ভয় করে কঠোর হিসাবকে’ (সুরা রাদ: ২১)।
আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার সফলতায় আয়ু ও রিজিক বৃদ্ধি পায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি নবি করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে’ (বুখারি: ৫৯৮৫)।
পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে অনেক সময় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়, তবে এসব পেছনে ফেলে যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করে যায় আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- একদা এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কিছু আত্মীয় আছে আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলি; কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করি; তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের সঙ্গে সহিষ্ণু আচরণ করি; তারা আমার সঙ্গে মূর্খের মতো আচরণ করে। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি যেমনটি উল্লেখ করেছ যদি তুমি তেমন হও তা হলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই ছুড়ে দিচ্ছ। তুমি যতক্ষণ এর ওপর অটল থাকবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে তোমার সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী থাকবে’ (মুসলিম: ২৫৫৮)।
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় পুরস্কারের পাশাপাশি সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তা’য়ালা যেসব গুনাহের শাস্তি দুনিয়াতেও দেন এবং আখেরাতেও দেন, সেগুলোর মধ্যে নিপীড়ন ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার সমান কোন গোনাহ নেই (ইবনে মাজাহ: ৪২১১)। অন্য হাদিসে নবি করিম (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না’ (বুখারি: ৫৯৮৪; মুসলিম: ২৫৫৬)।