দেশের পাঁচ জনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। সেই হিসেবে মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের রোগী। কিন্তু এসব মানুষের অধিকাংশই জানেন না, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এই না জানা মানুষেরা হচ্ছেন ৫১ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ পুরুষ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারস কনফারেন্স রুমে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ‘হাইপারটেনশন অ্যান্ড হার্ট হেলথ’ শীর্ষক কর্মশালায় উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ক এসব তথ্য জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহায়তায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) দু’দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ৩০ সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। আজ ছিল কর্মশালার শেষ দিন।
এসময় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর জন্য দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে রক্তচাপ পরীক্ষা ও ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
তারা জানান, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মি.মি. পারদচাপ। রক্তচাপের মাত্রা দুটি ভিন্ন দিনে ১৪০/৯০ মি.মি. পারদচাপ বা তার বেশি হলে বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রয়েছে। তবে বয়স ভেদে এই রক্তচাপ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে বলেও জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জন অনুভূতি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা না হলে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক, হার্টফেল এবং হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রোকও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কর্মশালায় জানানো হয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বেশকিছু নীতি ও কর্মপরিকল্পনা থাকলেও এ বিষয়ে দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি নেই।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন করা, অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া, ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, তামাক ও মদ্যপান পরিহার করা, অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার বিষয়ে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজির অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর সেন্টার ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজ অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা, জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মো. রুহুল কুদ্দুস, এনটিভির হেড অফ নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স জহিরুল আলম, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মার কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, কো-কনভেনর নাদিরা কিরন ও মিজান চৌধুরী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।