ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে মাত্র চারবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ৪ বছর ৮ মাস আগে ২০১৮ সালে চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ফলে পঞ্চম সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন হাজারও শিক্ষার্থী। এদিকে নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলছে না শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির। মূল সনদপত্রের পরিবর্তে সাময়িক সনদপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে অনেককে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হচ্ছে নানা আলোচনা। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম সমাবর্তনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হলে শিক্ষার্থীদের এ আলোচনা আরও প্রবল হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সমাবর্তন না হলেও অন্তত তাদের যেন মূল সনদপত্র দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৪ বছর পর ১৯৯৩ সালে ইবিতে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯৯ ও ২০০২ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং ১৬ বছর পরে ২০১৮ সালে চতুর্থ ও সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী মূল সনদপত্র হাতে পান। চতুর্থ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর এবং ২৩৬ তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন প্রাপ্ত এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালটির ১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত অন্তত ৭ হাজার শিক্ষার্থী তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এদিকে ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের অধিকাংশ বিভাগের স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিভাগের স্নাতকোত্তরও সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বর্ষের এমফিল ও পিএইচডি গবেষকরা নিয়েছেন তাদের ডিগ্রি। তবে তাদের কেউই পাননি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা-নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সমাবর্তন ছাড়া মূল সনদপত্র ছাপানো হয় না, সাময়িক সনদপত্র দেওয়া হয়। তবে জরুরি প্রয়োজনে বা বিশেষ ক্ষেত্রে বিভাগের সুপারিশে উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে মূল সনদপত্র প্রদান করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আয়শা বলেন, ৪৩ বছরে মাত্র চারবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়া প্রমাণ করে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জোট ঐক্যমঞ্চের আহ্বায়ক নুরুল্লাহ মেহেদী বলেন, সমাবর্তন আয়োজনে প্রশাসনিক সদিচ্ছাই যথেষ্ট কিন্তু তারা সেটা করছে না। দীর্ঘ মেয়াদে সমাবর্তন না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মূল সনদপত্র উত্তোলন করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, সমাবর্তন শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সনদপত্র গ্রহণ প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। আমরা চাই নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর সমাবর্তন হোক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা এবং অবস্থানগত কারণে নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব হয় না।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার। এটা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। তবে এর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রয়োজন হয়। করোনার ধকল কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পুরোদমে চলতে শুরু করেছে একারণে একটু সময় প্রয়োজন।