রাকিবুল হাসান রাকিব, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে ওল কচু চাষ। ওল কচু সুস্বাদু ও পুষ্টিগণ সম্পন্ন হওয়ায় বাজাছে এ সবজিটির চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। ওল কচু চাষে খরচ কম লাভ হয় প্রায় ৪ গুণ এবং এ ফসল পতিত জমিতেও চাষ করা যায়।
চাষীরা কৃষি বিভাগের উন্নত জাতের কন্দাল ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় এবার ওল কচু চাষ করছে। জেলার জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলায় ওল কচু চাষ হয়েছে।
সদর উপজেলার কোমর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে কন্দাল ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় আমি এবার বৈশাখ মাসের শেষের দিকে ২০ শতক জমিতে ওল কচু চাষ করেছি। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সার ও ওষুধ প্রয়োগ, চারা রোপন, জমির পরিচর্যা ও সেচ সহ এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা তবে ফসল ওঠা পর্যন্ত আরও অন্তত ৫ হাজার টাকা খরচ হবে। সব মিলে ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। বীজ বোপনের ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যেই এ ফসল ওঠে। অগ্রহায়ণ বা পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় এর ফসল তুলতে পারব। ২০ শতক জমিতে আমি ওল কচুর চারা লাগিয়েছি ৪শ’৫০টি এর মধ্যে যদি ৫০টি চারা মরে গেলেও থাকবে ৪শ’ টি। প্রতিটি গাছ থেকে ৬ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত ওল পাওয়া যাবে। সে হিসেবে আমার ফলন হবে ২ হাজার ৪শ’ কেজি। যার খুচরা বাজার দর প্রতি কেজি ওল কচু ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। সে হিসেবে পাইকারিতে বিক্রি করলেও আমি এ ওল কচু বিক্রি করে পাওয়া যাবে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার লাভ থাকবে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। এমন লাভের সম্ভাবনায় থাকায় আগামীতে এ এলাকায় ওল কচুর চাষ আরও বাড়বে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উন্নত জাতের কন্দাল ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লট হিসেবে সদর উপজেলায় বেশ কিছু কৃষক এবার ওল কচু চাষ করেছেন। সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের ধলাহার গ্রামের কৃষক নুরমোহাম্মদ এবং সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের কিন্দুল গ্রামের কৃষক শ্রী সাগর বর্মন এবং বম্বু ইউনিয়নের কোমর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম তাদের মধ্যে অন্যতম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ওলকচু সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতারাও পছন্দ করেন এ সবজিটি। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকরা গাছ প্রতি ৭ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ওলের ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাজারে ওলকচুর পাইকারি দাম পাবে ভাল।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কায়সার ইকবাল বলেন, ওল কচু চাষে খরচ হয় নামমাত্র। কিন্তু লাভ হয় তিন থেকে চার গুণ। এই ওল কচু এমন একটি ফসল যাতে পোকা-মাকড়ের বালাই নাই। রোগ-বালাই কম। অনাবৃষ্টি বা খরার কবলে না পড়লে, সেচের প্রয়োজন হয় না। এমন কি গরু, ছাগলেও এ গাছ খায় না। পরিত্যাক্ত আধা ছায়া জায়গাতেও এটি হয়। অবশ্য রোদযুক্ত জায়গায় লাগানো গেলে, ফলন ভালো হয়। বাজারদর কম থাকলে, ফসল না তুললেও ক্ষতি হয় না। বরং দেরিতে তুললে ফলন আরো বাড়ে। আলু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না তুললে, জমিতে পচে নষ্ট হয়। কিন্তু ওল কচুর মাটির নিচে থাকলে আকারে বড় হয় কিন্তু নষ্ট হয় না। মোটকথা, ওল কচু চাষে লোকসানের কোন আশঙ্কা নেই। এক কথাই ওল কচু চাষে রিস্ক বা ধরা খাওয়ার কোনো উপায় নেই। যারা কৃষিকাজে নতুন আসছেন, তাদের জন্যও ওল চাষ নিরাপদ। তাই জয়পুরহাটের কৃষকদের ওল চাষে আগ্রহী করার জন্য কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগীতা করছে। এজন্য সদর উপজেলার দর্শনীয় স্থানে বেশ কিছু প্রদর্শনী প্লট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।