সময়ের সাথে সাথে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে নারী ও শিশুসহ এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে ৬২ জন।
সোমবার সকালে আরো পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল রোববার বোদা উপজেলার আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। মৃতের সংখা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
জেলা তথ্য কেন্দ্র জানান, তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজের তৎপরতা চালাছে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর মহালয়া উপলক্ষে নদীর অপর পাড়ে বরদ্বেশ্বরী মন্দিরে ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে মৃতরা নৌকাযোগে করতোয়া নদী পার হচ্ছিলেন। বেংহাড়ি, মাড়েয়াসহ বিভিন্ন এলাকার সনাতন ধর্মাবলীরা বরদ্বেশ্বরী মন্দিরে পূজার জন্য আসতে থাকে। যাত্রী পারাপারের নৌকাটিতে ধারণ ক্ষমতা ৪০ জনের হলেও ১২০ জনের বেশি যাত্রী নিয়ে রওনা হয়। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে নৌকাটি ভারসাম্য হারি একপাশ কাত হয়ে ডুবে যায়। এ সময় অনেকে সাঁতার কেটে নদীর তীরে উঠতে পারলেও নারী ও শিশুরা সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে যায়।এছাড়া নদীর প্রবল স্রোতে অনেকেই ভাটির দিকে ভেসে যায়। যাত্রীদের চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ছুটে আসে। স্থানীয়রা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম জানান, করতোয়া নদীর পাড়ে ১২ জন নারী, সাতজন শিশুসহ ৩০ জনের লাশ দেখেছি। গত দু’দিন ধরে পঞ্চগড়ে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে করতোয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে বেশি পানি ও নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কারণে এত বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো: রেজাউল করিম বলেন, মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ১২০ জনে মতো যাত্রী নিয়ে বরদ্বেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিল। এ সময় নৌকাটি ডুবে যায়। এতে ৩০ জনের মৃত্যু হয়।
মাঝিরা বলেন, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ ছিল বেশি। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকার যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৪০ থেকে ৫০ জন। সেখানে পায় ১২০ জনের বেশি যাত্রী নেয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
উদ্ধার হওয়া যাত্রীদেরকে পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতাল ও বোদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকে স্বজনের খোঁজে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছেন। নৌকাডুবিতে এখনো ৬৩ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এখনো পর্যন্ত যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন পলি রানী (২৪), লক্ষ্মী রানী (৫০), শোভা রানী (২৭), খুকি রানী (৩৫), প্রিয়ান্তা রানী (৫), প্রলিমা রানী (৫৫), তারা রানী (২৪), শোকেনা রানী (৬০), ফালগুনী রানী (৫৫), ধনবালা (৮৭), সুমিত্রা রানী (৫৭), সফলতা রানী (৪০), শিমলা (৩৫), উশোষী (২), তনুশ্রী (২), শ্রেয়শী রানী (২), শ্রামলী, রুপালী (৩৫), দীপংকর (৫), অমলচন্দ্র (৩৫), নৌকার মাঝি হাসান আলী (৫২), বিমল (৪৫), জোতিষ চন্দ্রসহ আরো অনেকে।
পঞ্জগড় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় রোববার বিকেলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিপংকর রায়কে আহ্বায়ক করে পাচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের সৎকারে প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী বলেন, এখন পর্যন্ত ৩০জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যার আলোর স্বল্পতার কারণে অভিযান স্থগিত রাখা হয়। সোমবার সকাল থেকে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।