এই মৌসুমে শিশুদের হাত পা ও মুখের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। সঠিকভাবে রোগ চিহ্নিত করতে না পারায় সুচিকিৎসাও দেওয়া হয় না। এতে রোগীর কষ্ট বাড়ে।
হাত পা ও মুখের রোগ হলে মুখে ঘা এবং হাত ও পায়ে ফুসকুড়িসহ জ্বর হয়। এটাকে অনেকেই চিকেনপক্স, হারপিস সংক্রমণ, খোসপাঁচড়া বা স্কেবিস বলে ভুল করছেন। আসলে এটা হাত, পা ও মুখের রোগ বা হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ (Hand-Foot-Mouth Disease)। এ রোগ হলো একটি হালকা প্রকৃতির কক্সস্যাকি ভাইরাল সংক্রামক রোগ, যা সাধারণত ছোট বাচ্চাদের বেশি আক্রান্ত করে। হাত, পা ও মুখের রোগ মূলত শিশুদের রোগ হলেও এটা প্রাপ্তবয়স্কদেরও আক্রান্ত করতে পারে।
জ্বর শুরু হওয়ার এক বা দুদিন পর মুখ বা গলার সামনে ব্যথাসহ ঘা বা ক্ষত হতে পারে। জিহ্বা, মাড়ি এবং গালের ভেতরে বেদনাদায়ক, ফোস্কা-সদৃশ ক্ষত দেখা দেয়। হাতের তালুতে, তলপেটে এবং কখনো কখনো নিতম্বে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ফুসকুড়ি চুলকায় না, তবে মাঝে মাঝে ফোস্কা পড়ে। ত্বকের রঙের ওপর নির্ভর করে ফুসকুড়ি আশপাশের ত্বকের চেয়ে গোলাপি, লাল, সাদা বা ধূসর রঙের ছোট ছোট দাগ হিসাবে দেখা যেতে পারে। দাগগুলো ফোস্কা হয়ে যেতে পারে এবং বেদনাদায়কও হতে পারে। প্রাথমিক সংক্রমণ থেকে লক্ষণ প্রকাশের সময় পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়কাল (ইনকিউবেশন পিরিয়ড) ৩ থেকে ৬ দিন। বাচ্চাদের জ্বর এবং গলাব্যথা হতে পারে। ছোট শিশু এবং সদ্য হাঁটা শুরু করা বাচ্চাদের (toddlers) মধ্যে অস্থিরতা, কখনো কখনো ক্ষুধামন্দা বা অরুচি দেখা দেয় এবং শিশু অসুস্থতা বোধ করে।
* চিকিৎসা
হাত, পা ও মুখের রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। অসুস্থতা সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজেই ভালো হয়ে যায়। ঘনঘন হাত ধোয়া এবং আক্রান্ত রোগীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানো সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। উপসর্গ অনুযায়ী জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, চুলকানির জন্য অ্যন্টিহিস্টামিন, ফুসকড়ির জন্য ক্যালামিন লোশন, মুখের ঘায়ের জন্য ওরাল জেল দেওয়া যেতে পারে। প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন মুখ বা গলাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শিশুর পানিশূন্যতা রোধ করতে বেশি বেশি পানি ও তরল পান করাতে হবে। দই, পায়েস, ফিরনি, নরম খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে। মসলাদার খাবার দেওয়া উচিত নয়।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
হাত, পা ও মুখের রোগ একটি অক্ষতিকারক বা সামান্য অসুখ। এতে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যদি শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হয়, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়, অথবা মুখে ঘা বা গলাব্যথার কারণে দুধ পান করা কষ্টকর হয়, তাহলে জরুরিভাবে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ১০ দিন পরও রোগীর উন্নতি না হলে আবারও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হাত, পা ও মুখের রোগে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না।