ইউক্রেনের দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রাজধানী খেরসন থেকে সব সেনাই গুটিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার ভোরে সেনা প্রত্যাহার শেষ হয় বলে জানায় দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা প্রতিরোধে পর্যুদস্ত রুশ বাহিনী ঘোষণার এক দিনের মাথায় সেনা প্রত্যাহার করে নিল। রুশ সেনারা পিছু হটায় শহরটিতে এখন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে এসেছে ইউক্রেনের হাতে। প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয়ে ওড়ানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। রাস্তায় পতাকা হাতে বেরিয়ে উল্লাস করছেন শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ।
এটিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের জন্য ইউক্রেনে আরও একটি বড় পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে রাজধানী কিয়েভ থেকেও অপমানজনকভাবে পিছু হটেছিল রুশ বাহিনী। খবর বিবিসির।
খেরসন থেকে রুশ সেনারা পিছু হটলে পশ্চিম দিক থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রবেশ করে শহরে। এ সময় তাঁদের স্বাগত জানান বাসিন্দারা। তবে তাঁরা পুরোপুরি সতর্ক, কোনো তাড়াহুড়ো করছেন না।
বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি বোয়েন জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী সরে গেছে বলা হলেও বিশ্বাস করছেন না ইউক্রেনীয় সেনারা। এটি মস্কোর ফাঁদ হয়ে থাকতে পারে বলে প্রবল সন্দেহ তাঁদের। তাই শহরে প্রবেশে পদক্ষেপ নিচ্ছেন খুব ভেবেচিন্তে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ক’দিন পর মার্চে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখল করে নেয় রুশ বাহিনী, যা আট মাসের মাথায় হাতছাড়া হলো। খেরসনসহ চারটি অঞ্চলকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিজেদের বলে ঘোষণাও করেছিলেন পুতিন।
তবে এই সেনা প্রত্যাহারকে যুদ্ধে নিজেদের ব্যর্থতা বলতে নারাজ মস্কো। এটিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কৌশলী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন। সেনা প্রত্যাহার করা হলেও খেরসন এখনও নিজেদের বলেই দাবি করছে মস্কো।
এদিকে, ডিনিপ্রো নদীর ওপর নির্মিত খেরসনের প্রধান আন্তোনিভস্কি সেতুর একটি অংশ শুক্রবার ভোরে ভেঙে পড়েছে। ঠিক কী কারণে সেতুটি ভেঙে পড়ে, তা স্পষ্ট না হলেও এর আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ডনিপ্রো নদীর তীরে ভারী গোলাবর্ষণ হচ্ছে। ওই সময় রুশ সেনারা অন্ধকারের মধ্যে ব্রিজের ভাঙা অংশ ধরে কোনো মতে নদী পার হয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। এই সেতুর পশ্চিম দিকেই অবস্থান ছিল রুশ বাহিনীর।
অব্যাহতভাবে বিভিন্ন গ্রাম ও শহর পুনরুদ্ধার করা ইউক্রেন এখন আরও প্রত্যয়ী। সেনা প্রত্যাহারকে উপহাস করে কিয়েভ বলছে, ‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীর করুণ পরিণতি হয়েছে।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দক্ষিণের আরও ৪০টির বেশি বসতি পুনরুদ্ধার করেছে তাঁদের বাহিনী। তবে, রুশ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তাঁরা খুব সতর্ক।
এদিকে, ইউক্রেনকে আরও এক লাখ আর্টিলারি শেল দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এসব কেনা হবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে এসব দিতে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হবে ৪০ কোটি ডলার। যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে থাকবে- বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র ও ব্যাপক গোলাবারুদ। এ ছাড়া, চারটি খুব গতির অ্যাভেঞ্জার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এই প্রথম এ ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়া হচ্ছে ইউক্রেনকে। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও দেশটির জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
খেরসন শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার করে এরই মধ্যে নদীর পূর্ব পাশে সেনা মোতায়েন সম্পন্ন করেছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, এই পত্যাহারে তাদের কোনো সেনা বা অস্ত্রের ক্ষতি হয়নি।
সেনা প্রত্যাহার করলেও থেমে নেই রুশ বাহিনী। শুক্রবারও মাইকোলাইভ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, এতে অন্তত ৬ জন নিহত হয়।