ভূলতা-বিশনন্দী আঞ্চলিক মহাসড়কের আড়াইহাজার উপজেলার ১৮ কিলোমিটার অংশে দুর্ঘটনা থামছেই না। চলতি বছর এ অংশে ৫০টির বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন। ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার বেপরোয়া গতির কারণে এ অংশে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ফলে যাত্রীদের আতঙ্ক নিয়ে এ সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বালু পরিবহনের জন্য প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে কয়েকশ ট্রাক চলাচল করে। পাশাপাশি চলছে পাঁচ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ট্রাকগুলো খালি অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে চলে। অতিরিক্ত বালুবোঝাই করলেও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এরই মধ্যে অটোরিকশা বেপরোয়া গতিতে চলায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
আড়াইহাজার থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, চলতি বছর অন্তত অর্ধশত দুর্ঘটনার অধিকাংশই ট্রাক ও অটোরিকশা মধ্যে ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ২০ জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। গত ১ নভেম্বর ঝাউগড়া এলাকায় শ্রমিক বহনকারী লেগুনার সঙ্গে নছিমনের সংঘর্ষে সোহেল মিয়া নামে এক গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত হন। ২৮ অক্টোবর পাঁচরুখীতে বাস ও লেগুনার সংঘর্ষে শ্রমিক কুলসুম বেগম ও লেগুনাচালক ফেরদাউস হোসেন নিহত হন। আহত হন তিনজন। লেঙ্গরদী এলাকায় কাভার্ডভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটো ও লেগুনাকে ধাক্কা দিলে রতন ও দ্বীন ইসলাম নামে দু’জন নিহত হন। গত ১৫ মে অটোরিকশার চাপায় মহিউদ্দিন বাবুর্চি নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হন তিনজন। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন।
একই দিন জালাকান্দি এলাকায় নিষিদ্ধ নছিমন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে প্রাণ যায় মো. নাঈম নামে এক কিশোরের, আহত হন ছয়জন। গত ১২ অক্টোবর পাল্লা এলাকায় সফর আলী কলেজে আসার সময় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিজসহ তিনজন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত হন। পরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে।
সরকারি সফর আলী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. গিয়াউদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনা একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়। তিনি চান না নাফিজের মতো অকালে কেউ ঝরে যাক। বাঁচবো বাঁচাবো সমাজসেবা সংগঠনের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী বলেন, চালকরা সড়কে গতি মানছেন না। সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। চালকদের অদক্ষতা, সড়ক আইন না মানা আর জনসাধারণের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির অধিকাংশ স্থানে গাড়ি নিয়ন্ত্রিত গতিতে চালানোর সাইনবোর্ড বা সতর্কতা সংকেত নেই। স্থানীয়রা বলছেন, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোয় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হলেও দুর্ঘটনা কমবে। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশনন্দী থেকে ভূলতা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন হয়েছে। প্রশস্ত হওয়ায় দ্রুত এক স্থান থেকে অন্যত্র যাতায়াত সহজ হয়েছে। কিন্তু যানবাহনের চালকরা গতিসীমা না মানায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়কে চলার সময় সাবধান থাকলেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়া গতিতে অটোরিকশা চালানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সবাই বেশি গতিতে চালায়। এ কারণে তিনিও চালান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ট্রাকচালক বলেন, চালকরা সব সময়ই সাবধানে গাড়ি চালাতে চায়। কিন্তু সড়কে কয়েকশ ট্রাক চলে। এতে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদার বলেন, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চালকদের বৈধতা যাচাই করে পুলিশ। সবাইকে সচেতন করতে দ্রুত চালক, মালিক ও সুশীল সমাজের লোকজনকে নিয়ে সভা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, আঞ্চলিক মহাসড়কে অতিরিক্ত গতির যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে। কোনো যানবাহন গতিসীমা লঙ্ঘন করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।