জীবন রক্ষার অন্যতম উপাদান পানি প্রাপ্তিতে শুদ্ধাচার ব্যবস্থাপনা চর্চার মাধ্যমে ওয়াসাসহ সব ইউটিলিটিগুলোকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, বাংলাদেশকে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে সব স্টেকহোল্ডারকে এ সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনা ও কৌশলপত্র বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করতে হবে। এ জন্য শুদ্ধাচার (ইন্টিগ্রিটি) ব্যবস্থাপনা চর্চার মাধ্যমে ওয়াসা, ডিপিএইচইসহ ইউটিলিটিগুলোকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমকে আরও বেশি কার্যকর হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার রাজধানীর লালমাটিয়ার এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের প্রধান কার্যালয়ে ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওর্য়াক আয়োজিত সভায় তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পানি খাতে শুদ্ধাচার নিশ্চিতকরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওয়াশ বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় মুখার্জি। তিনি শুদ্ধাচার ব্যবস্থাপনা চর্চার মাধ্যমে ওয়াসা, ডিপিএইচইসহ সব ইউটিলিটিকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমকে আরও বেশি কার্যকর হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে এনজিও ফোরামের নির্বাহী পরিচালক এসএমএ রশীদ এসডিজি-৬ অর্জনের জন্য সরকারের পাশাপাশি সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে সব স্টেকহোল্ডারকে পানি ও স্যানিটেশন সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনা ও কৌশলপত্র বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করতে হবে। নিরাপদ পানি প্রাপ্তি একটি মানবাধিকার, আর এ মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া হার্ড-টু-রিচ অঞ্চলের মানুষের পানির সমস্যা তুলে ধরে তা নিরসনে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্কের (বাউইন) প্রজেক্ট ফোকাল ও কো-অর্ডিনেটর কাজী মনির মোশারফ ইন্টিগ্রিটি চর্চা বাড়াতে গণমাধ্যম এবং বাউইন সদস্যদের একসঙ্গে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রচার আহ্বান জানান।
ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেন।
জার্মানভিত্তিক ওয়াটার ইন্টিগ্রিট নেটওয়ার্কের পক্ষে মিস রুচিকা সতিশ বাংলাদেশের পানি সেক্টরে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমসহ অংশীজনদের সঙ্গে ভবিষ্যতে কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বিএডব্লিউআইএন) হলো একটি মাল্টি-স্টেকহোল্ডার নেটওয়ার্ক, যেখানে বাংলাদেশের সিএসও, এনজিওসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবার জন্য নিরাপদ পানি প্রাপ্তিতে রাষ্ট্রকে দায়বদ্ধ করে এসডিজি অর্জন ও মানবাধিকার অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।
বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (ইঅডওঘ), এনজিও ফোরাম পানি, স্যানিটেশন সেক্টরের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসা, খুলনা ওয়াসা এবং রাজশাহী ওয়াসাকে জনবান্ধব ও সেবার মান উন্নত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
নাগরিকদের অধিকারকে লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (এনআইএস) প্রণয়ন করেছে। যার রূপরেখা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘রাষ্ট্র ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা’। গণমাধ্যম সরকারের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (এনআইএস) প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।