প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫৩তম সমাবর্তন আজ। এতে অংশ নিচ্ছেন ৩০,৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক। সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে। সমাবর্তন বক্তা হিসাবে উপস্থিত থাকবেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. জেন তিরল। এদিকে স্বর্ণপদকে স্বর্ণের পরিমাণ কম থাকার খবর ফাঁসের পর সমালোচনার মুখে এর সমাধান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাবির সমাবর্তন উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞানবিজ্ঞানের নিবিড় চর্চা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে ও জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনবদ্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কলাভবন, কার্জন হল ও মল চত্বরে সরেজমিনে দেখা যায়, জটলা বেঁধে শিক্ষার্থীরা আড্ডা দিচ্ছেন। আবার কেউ দলীয়, একক বা মা-বাবার সঙ্গে ছবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করছেন।
সদ্য মাস্টার্স শেষ হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন হোসেন বলেন, অনেক সাধনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পড়ার সুযোগ পাই। এরপর পাঁচ বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইতি ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের। আর এখন বিদায়ের মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে ক্যামেরাবন্দি করছি।
বরিশাল থেকে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমার বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। গত ছয় বছরের মধ্যে আজই প্রথম তার বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম। এত শিক্ষার্থীর মধ্যে আমার ছেলেও যে তার পড়াশোনা শেষ করতে পেরেছে, তার জন্য নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক শেষ করা আরেক শিক্ষার্থী সাদিকুল ইসলাম বলেন, অনেক বাধাবিপত্তি পার করে আজ স্নাতক শেষ করে সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছি, এটা সত্যিই আমার জীবনের একটি বড় অর্জন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা-আমার এই সাফল্যের ধারা যেন অব্যাহত থাকে।
স্বর্ণপদকের সোনার গরমিলের সমাধান : সমাবর্তনে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে ১৭১টি। এসব স্বর্ণপদকের মধ্যে ৩৫টি স্বর্ণপদক পরীক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেগুলোর মধ্যে ৯৪ শতাংশ স্বর্ণপদকে কম সোনা পাওয়া যায়। এমন গরমিলের বিষয়টি স্বীকার করেছে স্বর্ণপদক পরীক্ষা কমিটি এবং জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ। যদিও সমালোচনার মুখে কম স্বর্ণ থাকা পদকগুলোয় পুনরায় ঘাটতি স্বর্ণ পূরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবর্তন উপলক্ষ্যে ১৩ নভেম্বর দাদা মেটাল প্রসেসকে ১৭১টি স্বর্ণপদক তৈরির অর্ডার দেয়। তাদের তিন দিন সময় দেওয়া হয়। প্রতিটি স্বর্ণপদকে সাড়ে চার গ্রাম করে স্বর্ণ থাকতে হবে বলে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা স্বর্ণপদক তৈরি করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাংলাদেশ পরমাণু কমিশনে পাঠায়। সেখানে ১৭১টির মধ্যে ৩৫টি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে মাত্র দুটি স্বর্ণপদকে নির্ধারিত সাড়ে চার গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া যায়। তবে ২১টি স্বর্ণপদকে চার গ্রামের বেশি এবং বাকি ১২টিতে তিন গ্রাম করে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৩৫টি স্বর্ণপদক পরীক্ষা করতে দেওয়া হলে তার মধ্যে ৩৩টি স্বর্ণপদকে কম সোনা পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস ছামাদকে আহ্বায়ক করে একটি প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়। প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মোহাম্মদ গোলজার হোসেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রতন চন্দ্র ঘোষ, গণিত বিভাগের অধ্যাপক এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন দাস।
এ বিষয়ে পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্য রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মোহাম্মদ গোলজার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা কিছু স্বর্ণপদকে স্বর্ণের পরিমাণ কম পাই। পরবর্তী সময়ে সেগুলো ফেরত পাঠিয়ে ঘাটতি স্বর্ণ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মোট ৫২ জনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। আজ প্রফেসর ড. জেন তিরলকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদানের মাধ্যমে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৩ জনে।
সমাবর্তনে যেসব নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে : সমাবর্তন উপলক্ষ্যে বেশকিছু নির্দেশনা মানতে হবে। বৃহস্পতিবার ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব নির্দেশনা তুলে ধরেন। উপাচার্য বলেন, ঢাবি গ্র্যাজুয়েট ও উপাদানকল্প কলেজ/ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তনের মূল ভেন্যু ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। আর অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ভেন্যু থেকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবেন। ঢাবির গ্র্যাজুয়েটরা খেলার মাঠের সুইমিংপুলসংলগ্ন গেট দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করবেন।
তাদের জন্য সকাল সাড়ে ৯টায় গেট খোলা হবে এবং তারা বেলা ১১টার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানস্থলে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করার পর কোনোক্রমেই মঞ্চের আশপাশে ও অন্যান্য স্থানে ঘোরাফেরা করা যাবে না। আমন্ত্রিত অতিথিরা সংলগ্ন গেট দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করবেন। তাদের জন্য সকাল ১০টায় গেট খোলা হবে এবং তারা বেলা সাড়ে ১টার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করবেন।