আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। বিশ্বকাপের আগে স্বপ্ন ভেঙে গেছে অনেক তারকা ফুটবলারের। চোটের কারণে থাকতে পারছেন না দলের সঙ্গে। চুরমার হয়ে গেছে তাদের সব স্বপ্ন-আশা
বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া কয়েকজন তারকা ফুটবলারের তালিকা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বেনজামা (ফ্রান্স)
শনিবার কাতারের দোহায় দলের সঙ্গে অনুশীলনে নেমেছিলেন করিম বেনজামা। এ সময় বাঁ পায়ের উরুতে তার পুরনো চোট জেগে ওঠে। শঙ্কা দেখা দিয়েছিল তখনই। অবশেষে এমআরআই করার পর জানা গেল চোট থেকে সেরে উঠতে অন্তত তিন সপ্তাহ সময় লাগবে তার। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই শেষ হয়ে গেছে তার কাতার বিশ্বকাপ।
পল পগবা (ফ্রান্স)
কাতার বিশ্বকাপে পগবার খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল অনেক আগে থেকেই। গত গ্রীষ্মের দলবদলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তিনি যুভেন্টাসে যোগ দেন। জুলাইয়ে ইতালিয়ান দলটির প্রাক-মৌসুম সফরের সময় ডান হাঁটুতে চোট পান এ মিডফিল্ডার।
শুরুতে বিশ্বকাপ খেলার ঝুঁকি বিবেচনায় অস্ত্রোপচার করানোর পক্ষে ছিলেন না পগবা। পরে অস্ত্রোপচার করাতে রাজি হন তিনি। ওই সময় তার ক্লাব যুভেন্টাস কোচ মাস্সিমিলিয়ানো আল্লেগ্রি বলেন, আগামী জানুয়ারির আগে পগবার মাঠে ফেরার সম্ভাবনা দেখছি না।
অক্টোবরের শেষ দিন পগবার এজেন্ট নিশ্চিত করে দেন, বিশ্বকাপের আগে পুরোপুরি সেরে ওঠার সম্ভাবনা নেই ২৯ বছর বয়সি এ ফুটবলারের। ফ্রান্সের ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ে পগবার ছিল বড় অবদান।
এনগোলো কান্তে (ফ্রান্স)
চার বছর আগে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ে মাঝমাঠে বড় ভরসা ছিলেন কান্তে। তাকেও এবার পাচ্ছেন না বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ক্লাব চেলসির হয়ে গত আগস্টে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে ম্যাচে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান তিনি। এর পর ছিলেন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায়। অক্টোবরের শুরুতে অনুশীলনের সময় আবার চোট পান তিনি। অস্ত্রোপচারের পর আরও চার মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে যান ৩১ বছর বয়সি ফুটবলার।
আর্থার মেলো (ব্রাজিল)
লিভারপুলের হয়ে খেলা আর্থার গত অক্টোবরে চ্যাম্পিয়নস লিগে রেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচে পায়ের পেশিতে চোট পান। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার পরে নিজেই জানান, বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না তার। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবার ব্রাজিল দলে ডাক পেলেও তার অভিষেক হয় পরের বছরের সেপ্টেম্বরে। তাই এখনো বিশ্বকাপে খেলা হয়নি ২৬ বছর বয়সি এ ফুটবলারের।
জিওভানি লো সেলসো (আর্জেন্টিনা)
এই মাসের শুরুর দিকে লা লিগায় ভিয়ারিয়ালের হয়ে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন লো সেলসো। পরে ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চোট সারাতে অস্ত্রোপচার করাতে হবে তার। এতে শেষ হয়ে যায় তার বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা। লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা দলে মাঝমাঠের বড় ভরসা তিনি। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময় স্কালোনি যেমন বলেন, লো সেলসোর বদলি হয় না।
টিমো ভেরনার (জার্মানি)
এই মাসের শুরুতে চ্যাম্পিয়নস লিগে শাখতার দেনেৎস্কের বিপক্ষে লাইপজিগের ম্যাচে গোড়ালির গাঁটে চোট পান ভেরনার। পর দিন তার ক্লাব জানায়, চলতি বছর আর মাঠে ফেরার সম্ভাবনা নেই ২৬ বছর বয়সি এ ফরোয়ার্ডের।
রিস জেমস (ইংল্যান্ড)
গত অক্টোবরে চ্যাম্পিয়নস লিগে এসি মিলানের বিপক্ষে চেলসির জয়ের ম্যাচে হাঁটুতে চোট পান জেমস। মাঠে চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। পরে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দলটি জানায়, আট সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে ২২ বছর বয়সি এ রাইটব্যাককে।
২০২০ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক থেকে এখনো পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলেছেন জেমস। ফিট থাকলে নিশ্চিতভাবেই গ্যারেথ সাউথগেটের বিশ্বকাপ দলে থাকতে তিনি। প্রথমবার বৈশ্বিক আসরে খেলার স্বপ্নটা তার স্বপ্নই রয়ে গেল এবার।
দিয়োগো জটা (পর্তুগাল)
প্রিমিয়ার লিগে গত অক্টোবরে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে লিভারপুলের জয়ের ম্যাচে পায়ের পেশিতে চোট পান জটা। স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। একদিন পর লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ নিশ্চিত করে দেন, বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না ২৫ বছর বয়সি এ ফরোয়ার্ড। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না হলেও লম্বা সময় তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে বলে জানান ক্লপ।
মার্কো রয়েস (জার্মানি)
অ্যাঙ্কেলের চোট থেকে সময়মতো সেরে না ওঠায় জার্মানির বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের অধিনায়ক মার্কো রয়েস। একই চোট ২০১৪ বিশ্বকাপ থেকেও ছিটকে দিয়েছিল তাকে।
বেন চিলওয়েল (ইংল্যান্ড)
এই মাসের শুরুর দিকে চ্যাম্পিয়নস লিগে দিনামো জাগরেবের বিপক্ষে চেলসির জয়ের ম্যাচে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান চিলওয়েল। যা তাকে ছিটকে দেয় বিশ্বকাপ থেকে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক থেকে ইংল্যান্ডের হয়ে এখন পর্যন্ত তিনি ম্যাচ খেলেছেন ১৭টি।
সাদিও মানে (সেনেগাল)
এই মাসের শুরুর দিকে বুন্ডেসলিগায় ভার্ডার ব্রেমেনের বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখের জয়ের ম্যাচে হাঁটুতে চোটে পান মানে। তখন থেকেই তাকে নিয়ে জাগে শঙ্কা। সেনেগাল কোচ আলিয়ু সিসে তবু বিশ্বকাপে মানেকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তাকে নিয়েই ঘোষণা করা হয় চূড়ান্ত দল। পরে দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘শুরুতে একাধিক ম্যাচে’ খেলতে পারবেন না মানে।
আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, চোট সারিয়ে তুলতে অস্ত্রোপচার করাতে হবে মানের। এতেই শেষ হয়ে যায় সেনেগালের সবচেয়ে বড় তারকার বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা।
হোয়াকিন কোররেয়া ও নিকোলাস গনজালেস, আর্জেন্টিনা
দুজনই জায়গা পান লিওনেল স্কালোনির চূড়ান্ত দলে। দলের সঙ্গে তারা আসেন আবুধাবিতে। সেখানে গত বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে জয়ের প্রীতি ম্যাচে বদলি নেমে একটি গোলও করেন কোররেয়া। কিন্তু অস্বস্তি অনুভব করার পর পরীক্ষায় তার ‘অ্যাকিলিস টেন্ডনে’ চোট ধরা পড়ে।
আর দলের অনুশীলনের সময় পেশিতে চোট পান গনজালেস। এতে দুই ফরোয়ার্ডই ছিটকে যান বিশ্বকাপ থেকে। দুজনের সামনেই ছিল প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলার হাতছানি।