পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে বালু ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহতরা হলেন- যুবলীগ কর্মী মাসুম (৩৫), সম্রাট (৩৫), মিরাজ (৩০) ও সুইট (৩২)।
শনিবার পর্যন্ত রাত সাড়ে ১০টা কোনো পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। পিন্টু বলেন আজ রবিবার থানায় অভিযোগ দেয়া হবে।
আহতদের মধ্যে পৌর শহরের হাসান আলীর ছেলে মাসুম ও আমবাগান এলাকার সানোয়ার হোসেনের ছেলে সম্রাটকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহত অপর দুইজনকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টুর সঙ্গে বালুর ব্যবসা নিয়ে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের মতবিরোধ চলছিল। চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টুর বিআইডব্লিউটি এর কাছ থেকে কেনা বালুর আধিপত্য নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়।
বালু উত্তোলনের পর সাইফ্জ্জুামান পিন্টু প্রায় তিন মাস হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে বালু স্তুপ করে রেখেছেন। এ বালুর আধিপত্য নিয়ে পিন্টু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জহুরুল ইসলাম মালিথার মধ্যে পুনরায় দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
পিন্টু বলেন; আমি গত এপ্রিল মাসে বিআইডব্লিউটিএ’র ওপেন টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে ৭৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দরে ১ লাখ ২৫ হাজার ঘনফুট বালু নেয়ার অনুমতি পাই। ঢাকা হেড অফিসে আয়োজিত এই টেন্ডারে ঈশ্বরদীর ১৪ জন অংশগ্রহণ করেন। আমার দর ছিল প্রতি ঘনফুটে ৬১ টাকা।
সংঘর্ষের সময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এ ঘটনায় লাঠি, পাথর ও ইটের আঘাতে চারজন আহত হন। আহতরা হলেন- জহুরুল ইসলাম গ্রুপের সম্রাট, সুইট, মিরাজ এবং চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান গ্রুপের যুবলীগ কর্মী মাসুম।
পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টু বলেন, পদ্মা নদী ড্রেজিং করে উত্তোলিত বালু আমি বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে টেন্ডারে কিনেছি। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এ বালু পরিবহণ ও বিক্রিতে বাধা দেয় এবং চাঁদা দাবি করে। এজন্য তিন মাস বালু বিক্রি বন্ধ আছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে শনিবার থেকে বালু বিক্রি শুরুর কথা ছিল। এরইমধ্যে অপরপক্ষ আমাদের ওপর হামলা চালায়।
এদিকে জহুরুল ইসলাম মালিথা বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে কেনা বালু সাইফুজ্জামান পিন্টু অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন যে বালু আছে সেগুলো পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের। সেগুলো দখল করে বিক্রি করার জন্য পিন্টু সেখানে লোকজন জমায়েত করেন। আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিল। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হবিবুল ইসলাম হব্বুল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু মন্ডলসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হবিবুল ইসলাম হব্বুল বলেন, বিষয়টি সুরাহা করতে আমিসহ পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমরা চলে আসার পর শুনতে পাই দুইপক্ষের মারামারি হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পুলিশের একটি টিম ছিল। পুলিশ দ্রুত সংঘর্ষ থামিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা যায় এবং একটি জিপ গাড়ি, পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, বালু ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরোধ ছিল। সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা হয়। তারপরেও কেন মারামারির ঘটনা ঘটলো তা বুঝতে পারলাম না।